কে দাঁড়াবে আয়েশার পাশে ? লামায় যৌতুক না পেয়ে আগুনে পুড়িয়ে দিল স্বামী

NewsDetails_01

নির্যাতিতা বিবি আয়েশা
বান্দরবানের লামা উপজেলায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে এক স্বামী। উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের সোলেমান বাজার পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয়, ঘটনার পর বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া এক বছরের শিশুটিকেও মায়ের কাছ থেকে কেড়ে নেয় সে। বর্তমানে চিকিৎসার অভাবে পিত্রালয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন গৃহবধু বিবি আয়েশা (২১)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাত্র ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দিতে না পারায় রাতভর শারিরীক নির্যাতন শেষে সকালে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় পাষন্ড স্বামী মো. রাসেল। বিবি আয়েশার বাবা মো. মোস্তাফিজুর রহমান একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্দা এবং স্থানীয় একটি চা দোকানে দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালান তিনি। মা রোশনা বেগম ২০১৩ সালে মারা যান। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে আয়েশা দ্বিতীয়। স্বামী রাসেল সোলেমান বাজার পাড়ার বাসিন্দা মো. শাহাজাহান পিসি’র ছেলে। সে চট্টগ্রামস্থ সাইফুল আজিম ভুইয়া নামের এক ব্যক্তির বাগান ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত বলে জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষার তিন মাস পর বিবি আয়েশার সঙ্গে রাসেলের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের ৩-৪ মাস দাম্পত্য জীবন সুখেই কাটে তাদের। এরপর থেকে তাকে যৌতুকের জন্য আস্তে আস্তে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে স্বামী রাসেল। বিয়ের দেড় বছর পর তাদের কোলজুড়ে আশেকুল ইসলাম আয়ান নামের এক ফুটফুটে সন্তানেরও জন্ম হয়। ভবিষ্যত চিন্তা করে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীকে টাকা এনে দিতেন বিবি আয়েশা। এতেও স্বামী সন্তুষ্ট না হয়ে আরও বেশি টাকা এনে দেওয়ার চাপ শুরু করে।
আরো জানা গেছে, দিনমজুর বাবার কাছ থেকে টাকা আনতে না পারায় শুরু করে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে গত ১৪ আগস্ট দিনগত রাতভর আয়েশার ওপর শারিরীক নির্যাতন চালায় রাসেল। পরদিন সকালে স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে লাথি মেরে রান্না ঘরের জলন্ত চুলার মধ্যে ফেলে দিয়ে কোলের শিশুকে নিয়ে স্বামী রাসেল। এতে তার শরীরের গলা থেকে নাভি পর্যন্ত আগুনে পুড়ে গেলে স্থানীয় চেয়ারম্যান জসিম এর সহায়তায় উদ্ধার করে প্রথমে লোহাগাড়া হাসপাতালে, পরে চিকিৎসক তার অবস্থার অবনতি দেখে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনায় বিবি আয়েশার পরিবার প্রতিকার চেয়ে আইনের আশ্রয় নেননি। এর কারণ হিসেবে জানান, আইনের আশ্রয় নিতে গেলে টাকা লাগবে, টাকা কোথায় পাবো? তাই থানা পুলিশ করেননি।
আজ আয়েশার পিত্রালয়ে সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বিছানায় কাতরাচ্ছেন আয়েশা। জ¦লসে যাওয়া শরীরের যন্ত্রণার কারণে ঠিকমত কথা বলতে পারছেনা। এসময় তার স্বজনরা কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, এসএসসি পরীক্ষার দেওয়ার এক বছর আগে তার মা মারা যান। গরীব বাবার পক্ষে পড়ালেখা ও সংসার চালানো কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ার কারনে বিয়ে দেন তারা। কিন্তু রাসেল তাকে প্রতিনিয়ত যৌতুক দাবী করে নির্যাতন করে আসছিল। শেষের দাবীকৃত ৫০ হাজার টাকা দিতে না পারায় আয়েশাকে আগুনে পুড়ে মারার চেষ্টা করেছে সে।
তারা আরও জানায়, আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের আর্থিক সহায়তায় বিবি আয়েশাকে তাৎক্ষনিক চমেক বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। প্রতিদিন চিকিৎসা বাবদ ৩ হাজার টাকার প্রয়োজন। তাই খরচের অভাবে আশংকাজনক অবস্থাতেও তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে বাড়িতেই চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন বিবি আয়েশা।
এই ব্যাপারে আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন কোম্পানী বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক, বর্তমানে অর্থভাবে দ্বগ্ধ আয়েশার চিকিৎসা চালাতে পারছেন না তাঁর দরিদ্র পরিবার। তাকে চিকিৎসা সহায়তার জন্য সমাজের বিত্তশালীদের সহায়তা কামনা করছি। একই সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিকট আইনি সহায়তা কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় পাষন্ড স্বামী রাসেলের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
আয়েশাকে সাহায্য পাঠানোর জন্য-
বিকাশ নং- ০১৮৫৮৩৪৮২৯২ (বড় ভাই নবী হোসেন)।

আরও পড়ুন