লামায় তামাকের বিকল্প আখ চাষে লাভবান চাষীরা

NewsDetails_01

লামায় আখ চাষ
বান্দরবানের লামা উপজেলায় পরিবেশের ক্ষতিকর তামাকের বিকল্প আখ চাষের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদিত আখের আশানুরূপ দাম পেয়ে চাষীরাও বেশ খুশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যক্তিগত উদ্যোগের পাশাপাশি কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন’র অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকেরা আখ চাষ করেছেন। আখ চাষের অধিকাংশ জমিতেই ইতিপূর্বে তামাক চাষ হতো। তামাক চাষের জমিতে আখের এ বাম্পার ফলন, তামাকে চেয়ে শ্রম ও খরচ কম লাগে বিধায় কৃষকরা এখন আখ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ক্ষতিকর তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে আখের চাষ বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি ভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান অপরিহার্য বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, গত ৩ যুগের বেশি সময় ধরে লামা উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার আবাদি জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ হয়ে আসছে। তামাক চাষে লাভ বেশি হলেও শারীরিক ক্ষতি, পরিশ্রম এবং মূলধন বেশি লাগার কারনে অনেক কৃষকই স¤প্রতিকালে ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। একই সাথে তারা তামাকের বিকল্প ফসল চাষের চেষ্টা চালাচ্ছে। যে সকল কৃষক ক্ষতিকর তামাক চাষ করতেন তাদের অনেকেই এখন আখসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদার করণ প্রকল্পের আওতায় ১১০ জন চাষী বিএসআরআই ৪২ রং বিলাস, চায়না ২৮, অমৃত ৮৪১, সিও ২০৮ ও বিএমসি ৮৬৫৫০ জাতের আখ চাষ করেছেন। শুধু তাই নয়, এ সকল চাষীরা আখ ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে আলু, গাজর ও ফরাশ সিম,বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ আরো কয়েকটি কৃষি ফসল চাষে লামা কৃষি বিভাগ প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক কৃষক আখ চাষের সঙ্গে জড়িত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এখানের মাটি ও আবহাওয়া আখ চাষের উপযোগি এবং জলাবদ্ধতা না থাকায় চলতি মৌসুমে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি হেক্টর আখ চাষে কৃষকের খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকা। আর প্রতি হেক্টরে উৎপাদিত আখ ১০ থেকে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরজমিন লামা পৌরসভার শীলেরতুয়া গ্রামে আখ ক্ষেত পরিদর্শনে গেলে চাষী সুইচিংমং মার্মা বলেন, ৪০শতক জমিতে রং বিলাস ৪২ জাতের আখ চাষ করেছি। এতে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আখ বিক্রি করে তিনি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পাব। তিনি আরও বলেন, আগে এসকল ভূমিতে তামাক চাষ করে তিনি খরচ বাদ দিয়ে ৫ হাজার টাকাও লাভ করতে পারতাম না। সাথী ফসল হিসেবে আখের ফাঁকে গাজর, ফরাশসিম ও আলু চাষ করেছি।
লামা চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্দা খুচরা আখ ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, প্রতি শত আখ ২ হাজার ৫শ’ টাকা হারে ক্রয় করে তিনি সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। তার দেখা দেখি আরও অনেক কৃষক আখ চাষের প্রতি ঝুঁকেছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদার করণ প্রকল্প লামা উপজেলায় দায়িত্বরত বৈজ্ঞানিক সহকারি বসন্ত কুমার তঞ্চঙ্গা জানান, তাঁরা কয়েকজন কৃষকের মাধ্যমে পরীক্ষা মূলকভাবে সাড়ে তিন হেক্টর জমিতে এ বছর আখ চাষ করিয়েছেন। এর মধ্যে রংবিলাস ৪২, অমৃত ৮৪১, চায়না ২৮, সিও ২০৮ ও বিএমসি ৮৬৫৫০ জাতের আখ চাষ রয়েছে। এসবের মধ্যে চিবিয়ে খাওয়া ও চিনি বা গুড় জাত রয়েছে। তিনি আরও জানান, তামাকের বিকল্প চাষ হিসেবে এখানকার মাটিতে আখ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
লামা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. নুরে আলম জানিয়েছেন, পার্বত্য ভুমিতে আখ চাষের অনুকুল পরিবেশ বিদ্যমান। গ্রীষ্মপ্রধান দেশের রৌদ্রোজ্জ্বল উষ্ণ আবহাওয়ায় আদ্র মাটিতে আখের সব চেয়ে ভালো ফলন হয়। বেলে দোঁআশ থেকে শুরু করে এঁটেল পর্যন্ত সব মাটিতেই আখ চাষ করা সম্ভব হলেও পানি নিকাশের ব্যবস্থাযুক্ত এঁটেল দোঁআশ মাটি আখ চাষের জন্য সর্বোত্তম।

আরও পড়ুন