লামার বাতাসে পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ

NewsDetails_01

লামা উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করতে আনা কাঁঠাল
বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার পৌর শহর থেকে গ্রাম যেখানেই যান সেখানেই পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণ। সেই গন্ধেই অনেকের জিভে জল এসে যায়। তবে এবার ফলন ভালো না হওয়ায় চাষীরা পাচ্ছেনা ভালো দাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এখন লামার সর্বত্রই কাঁঠালের বাজার বেশ জমে উঠে। তবে এবারে লামায় কাঁঠালের ফলন তেমন একটা ভালো হয়নি। এছাড়া গতবারের চেয়ে এ বছর কাঁঠালের দাম কম হওয়ায় চাষীরাও হতাশ। প্রতি সাপ্তাহিক হাটের দিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে এখন সরগরম হয়ে উঠে উপজেলার প্রত্যন্ত হাট বাজারগুলো। যেখানে গত বছর প্রতি হাটের দিন প্রায় ১০ লাখ টাকার কাঁঠাল বিকিকিনি হত; সেখানে চলতি মৌসুমে মাত্র ৪-৫ লাখ টাকার কাঁঠাল বেচাকেনা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আরো জানা গেছে, এখানকার পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত কাঁঠাল স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়, তাই বিভিন্ন স্থানে এর চাহিদাও প্রচুর। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা- উপজেলার হাট বাজারে যাচ্ছে এ কাঁঠাল।
সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে কাঁঠাল বাগান মালিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে বাজারজাত করতে নারী-পুরুষ সবাই কাজ করছেন। এসব কাঁঠাল বাগানে অনেকে আবার শ্রমিক হিসেবেও কাজ করছেন। পাহাড়ে কাঁঠাল পাইকারি ও খুচরা বিক্রির জন্য এখন গড়ে উঠেছে মৌসুমি হাট। উপজেলা সদরে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বসে কাঁঠালের হাট। এছাড়াও বাগান মালিকরা প্রতিদিন বিক্রির জন্য রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ী, টেম্পো, জিপ, বাঁশের চালি ও নৌযোগে কাঁঠাল নিয়ে আসছে বিভিন্ন মৌসুমি বাজারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লামায় বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল চাষ না হলেও পৌর এলাকা এবং উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের পাহাড় ও প্রত্যেক বাড়ীতেই কাঁঠালের গাছ রয়েছে। চলতি মৌসুমে কি পরিমাণ কাঁঠাল বাগান কিংবা উৎপাদন হয়েছে তার সঠিক কোন হিসাব কৃষি বিভাগে নেই। তবে এলাকার এমন কোনো বাড়ি নেই যে, সেখানে ২০-৩০টি কাঁঠাল গাছ নেই। প্রতি বছর কাঁঠাল বিক্রি করে উপজেলার শতশত পরিবার স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
শনিবার পৌরশহরের কাঁঠাল হাটে কথা হয় লামা সদর ইউনিয়নের ছোট বমু এলাকার চাষী কফিল উদ্দিন এর সঙ্গে। তিনি বলেন, এ মৌসুমে কাঁঠালের ফলন তেমন ভালো হয়নি। বাগানে প্রায় ১০০টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে, এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেছি। অথচ গত বছর এ বাগান থেকে বিক্রি করেছিলাম প্রায় ২০ হাজার টাকার কাঁঠাল।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জসিম বলেন,বড় আকারের প্রতি’শ কাঁঠাল ৩০ হাজার টাকা, মাঝারি আকারের কাঁঠাল ১৮ হাজার এবং ছোট আকারের কাঁঠাল ৬ হাজার টাকায় কিনেছেন। এসব কাঁঠাল তিনি ফেনী ও নোয়াখালীতে নিয়ে বিক্রি করবেন। তার কেনা ৪শ কাঁঠালে খরচ বাদ দিয়ে আনুমানিক ৩০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন।
কক্সবাজারের মহেশখালীর ব্যবসায়ী জাফর আহমদ বলেন, পাহাড়ী এলাকার কাঁঠাল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। তাছাড়া যোগাযোগ ভালো থাকায় এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে বিক্রি করলে লাভও পাওয়া যায়। তবে দাম একটু বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগে লামা পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে প্রতিদিন ৮-১০ লাখ টাকার কাঁঠাল বিক্রি হত। যা এ বছর অর্ধেকে নেমে গেছে। এরপরও প্রতিদিন ট্রাক যোগে কাঁঠাল উপজেলা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম বলেন, পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া কাঁঠাল চাষের উপযোগী। এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁঠালের চাষ করা গেলে পাল্টে যেত অর্থনীতি। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন কিছুটা কম হয়েছে।

আরও পড়ুন