সব স্থাপনা থেকে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নাম মুছতে হাইকোর্টের নির্দেশ

NewsDetails_01

প্রয়াত চাকমা সার্কেল চিফ ত্রিদিব রায়
যুদ্ধপরাধের অভিযোগ থাকায় রাঙামাটির সাবেক চাকমা সার্কেল চিফ ত্রিদিব রায়ের নামে থাকা সব স্থাপনা থেকে ত্রিদিব রায়ের নাম ৯০ দিনের মধ্যে মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আজ দুপুরে এই নির্দেশ প্রদান করা হয়।
বিচারপতি রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশের সকল স্থাপনা থেকে ত্রিদিব রায়ের নাম মুছে ফেলতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, শিক্ষা সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও মেয়রকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রবিবার (২১ মে) চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নাম সকল স্থাপনা থেকে মুছে ফেলার নির্দেশনা চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা বদিউজ্জামান সওদাগর ও হেলাল উদ্দিন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
অভিযোগ আছে, একাত্তরে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের সহযোগিতায় রাঙামাটিতে গণহত্যা চলে।রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত বলেন, যদি তার নামে কোনও স্থাপনা থেকে থাকে তাহলে আগামী ৯০দিনের মধ্যে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শরীফ আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন,‘ত্রিদিব রায়ের নামে খাগড়াছড়িতে ত্রিদিবনগর, ত্রিদিবনগর সড়ক,ত্রিদিবনগর হাইস্কুল রয়েছে। এসব স্থাপনা থেকে তার নাম এখন মুছে ফেলতে অথবা নাম বদলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চাকমাদের তৎকালীন রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।
ত্রিদিব রায়-এর রাজনৈতিক জীবন ১৯৭১-এর পর থেমে থাকে নি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৩ সালে রাজা ত্রিদিব রায়কে দেশের প্রেসিডেন্ট হবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হতে চাননি বলে পদ গ্রহণ করতে পারেননি।
চাকমাদের ৫০তম রাজা ত্রিদিব রায়-এর নাম ১৯৭২ সালের দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি সেই অভিযোগ মোকাবেলা করার জন্য কখনো বাংলাদেশে ফিরে আসেননি এবং ৭৯ বছর বয়সে ২০১২ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি নির্বাসনে ছিলেন।
তিনি ছিলেন রাঙ্গামাটি সার্কেলের ৫০তম চাকমা রাজা ও সার্কেল চীফ। তার বাবা রাজা নলিনাক্ষ রায় ১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর মারা গেলে ত্রিদিব রায় ১৯৫৩ সালের ২ মার্চ সিংহাসনে বসেন। ১৯৭১ সালে দেশ ত্যাগ করেন এবং ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানেই মারা যান। তার লাশ দেশের রাঙামাটিতে আনতে চাইলে স্থানীয়দের বিরোধীতার কারনে পর্যন্ত লাশ পাকিস্তানে দাহ করা হয়। বর্তমানে তার ছেলে ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় রাঙ্গামাটি সার্কেলের চিফ ও চাকমা রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজা ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানে চলে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪২ বছর ধরে তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বসবাস করে আসছিলেন।

আরও পড়ুন