বর্তমান সরকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের ভাষা ও বর্ণমালা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে

NewsDetails_01

রাঙামাটিতে তিন দিন ব্যাপী ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নাট্য উৎসব
বর্তমান সরকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের ভাষা ও বর্ণমালা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রক্ষায় বদ্ধ পরিকর, তাই স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকটা ভাষাভাষি মানুষ তার নিজস্ব স্বত্তা বিকশিত করুক এটাই আমরা চাই। তিনি বলেন, নাটক জীবনের কথা বলে এই নাট্য উৎসবে যে সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী তাদের ভাষায় নাটক পরিবেশন করবে সেটা যাতে কোন বিকৃত না হয় সেই দিকে সকলকে লক্ষ্য রাখার আহবান জানান। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় রাঙামাটিতে তিন দিন ব্যাপী ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর নাট্য উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে দীপংকর তালুকদার এসব কথা বলেন।
রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিষ্টিটিউট মিলনায়তনে রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমার সভাপতিত্বে নাট্য উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য সবির কুমার চাকমা, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিষ্টিটিউটের পরিচালক রুনেল চাকমা, উসাইয়ের প্রাক্তন পরিচালক সুগত চাকমা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার আরো বলেন, ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষাকে যখন উপেক্ষা করে উর্দুকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার ঘোষনা করলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, তখন বাংলার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছিল এবং তারা প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছিল মাতৃভাষা বাংলাকে সরকারী ভাষা হিসেবে ঘোষনা করতে হবে। এই ভাষা আন্দোলন থেকে পরবর্তিতে বহুুবিদ আন্দোলনে জন্ম হয়েছিল। শুধু বাংলা ভাষাভাষী নয় পৃথিবীর যত সম্প্রদায় আছে তারা যেন তাদের মার্তৃভাষায় কথা বলতে পারে নিজেদর বর্ণমালায় পড়াশোনা করতে পারে এবং নিজেদের বর্ণমালা ভাষায় সাহিত্য চর্চ্চা করতে পারে এটা আমরা সকলেই চেয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিকতার কারনেই একুশে ফেব্রুয়ারী শুধুমাত্র বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্ছেনা, একুশে ফেব্রুয়ারী এখন আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস হিসিবে স্বিকৃতি পেয়েছে। এ দিবসে সারা পৃথিবীতে মর্যাদার সাথে উদযাপন করি। আমরা এই পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতির বসবাস। রাঙামাটির জেলার বাইরে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় গাড়, হাজং সাওতাল বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষের বসবাস।
আমাদের দীর্ঘ দিনের চাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূরণ করেছে। ইতিমধ্যে রাঙামাটিতে ৫০জন শিক্ষক ভোলান্টিয়ার হিসেবে বিভিন্ন ভাষাশিক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে বিনা বেতনে। বিনা বেতনে কাজ করাটা খুবই কঠিন। সেজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর নিকট একটি আবেদন করেছে ভাতা প্রদান করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী তাদের সেই আবেদন আমলে তাদের বেতনসহ বিভিন্ন ভাতা প্রদানের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছে এবং এই চিঠি প্রেরণ করেছে। আমরা আশা করছি তারা অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীর ন্যয় বেতন ও অন্যান্য ভাতা পাবে বলে আমরা আশা করছি।
আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বর্ণমালা ও ভাষাকে কিভাবে আরো বিকশিত করা যায় সেজন্য আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা পার্বত্য চট্টগ্রাম ফেকালিটি আছে সেভাবে তারা কাজ করে যাচ্ছে এবং আমাদের অনেক ভাষাবিদও সাহিত্যক এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাই স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকটা ভাষাভাষি মানুষ তার নিজস্ব স্বত্তা বিকশিত করুক। সকলে যার যার ন্যায্য অধিকার তারা পাই। আজকের এই নাট্য উৎসবে যার যার ভাষায় নাটক পরিবেশন করবে এটা অত্যান্ত ইতিবাচক দিক এটা আরো উন্নতি হউক।
সভাপতির বক্তব্যে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের ভাষা রক্ষায় নিজস্ব বর্ণমালার বই ছাত্র ছাত্রীদের হাতে তুলে দিয়েছে। স্কুল জীবন থেকে তাদের স্ব স্ব মাতৃ ভাষা লেখাপড়া করার মাধ্যমে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করতে পারবে। তিনি বলেন, গত বছর রাঙ্গামাটি জেলায় প্রথম বারের মতো ১৭ হাজার এবং এবছর প্রায় ২৭ হাজার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ছাত্র ছাত্রীকে হাতে এই বই তুলে দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জেলা পরিষদ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শিক্ষকদের মাতৃভাষায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আগামীতে আরো শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
নাট্য উৎসবে গতকাল বৃহস্পতিবার জুম ফুল থিয়েটার রাঙামাটির পরিবেশনায় চাকমা ভাষায় হুত্তেজ্যাপেদার ঘর তামাজা। শুক্রবার খাগড়াছড়ির য়ামুক নাট্য গোষ্ঠী পরিবেশনায় নুখুং চামিরি এবং রাঙামাটি ঝগড়াবিল ফু-কালাং সাংস্কৃতিক একাডেমীর পরিবেশনায় আক্কল নাটক মঞ্চস্থ হবে।

আরও পড়ুন