লামা-আলীকদম-চকরিয়ায় বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মধ্যে আসে !

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর-বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে বিদুৎ যায় না, মাঝে মধ্যে আসে। বিদ্যুতের এই ভেলকিবাজি এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সামান্য বৃষ্টি কিংবা হালকা বাতাসের অযুহাতেই পুরো তিন উপজেলা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। কখনো কখনো একটানা ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে লামা বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন এলাকাসমূহ। স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগ, লামা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই বিদ্যুত নিয়ে গ্রাহকদের এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও যেন দেখার কেউ নেই।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের লামা আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয়ের মাধ্যমে পার্বত্য লামা ও আলীকদম উপজেলা এবং পাশের চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর ও বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে আসছে। দিনভর বিদ্যুতের সারাক্ষণ না থাকা, আবার মাঝে মধ্যে আসার ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে গ্রাহকরা। ভেপসা গরমে বিদ্যুতের এ ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। লামা উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহক মো. জসিম উদ্দিন, আলীকদমের মো. কালাম ও চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের মো. আলমগীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সামান্য বৃষ্টি কিংবা হালকা বাতাস বয়ে যাওয়ার অযুহাতে মুহূর্তের মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে গিয়ে পুরো উপজেলা দু’টিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা বিদ্যুৎ বিহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। এ অবস্থায় যদি বজ্র বৃষ্টি, সাথে সামান্য ঝড়ো হাওয়া হয়, তা হলে তো কথাই নেই। এ কারণে কখনো কখনো একটানা তিন দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়না। এসময় দু’উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা সমুহের রেফ্রিজারেটর ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ চরমে উঠে। হাজার হাজার রেফ্রিজারেটরে থাকা লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ, মাংসসহ বিভিন্ন তরিতরকারি ও ফলমুল নষ্ট হয়ে যায়। তারা আরও জানায়, এ অবস্থার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন সড়কের পাশের গাছ পালাকে দায়ী করে সোজা উত্তর দেন, বিদ্যুতের তারে কোথাও গাছের ঢাল-পালা ভেঙে পড়ায় লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা দেখছি। তাদের এ দেখা ঘণ্টা পেরিয়ে কখনো বাহাত্তর ঘণ্টায়ও শেষ হয় না।
জানা গেছে, সড়কের পাশের গাছ কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও লামা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বরাদ্দকৃত টাকার সিকিভাগ কাজও বাস্তবায়িত হয় না। নামমাত্র কিছু ঢালপালা কেটে দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। ফলে বিদ্যুৎ লাইনের ওপর গাছ পালা ভেঙ্গে পড়ে। সম্প্রতি একটানা তিন দিন বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়লে লামা উপজেলা পরিষদ চত্বরে শত শত লোক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রকাশের চেষ্টা করলে উপজেলা প্রশাসন ও থানার হস্তক্ষেপে তা শান্ত হয়। পরবর্তীতে উপজেলা আইন শৃংখলা সভায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের গতানুগতিক জবাব দিয়ে উপস্থিত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েন লামা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে লামা বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন ৩৩/১১ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্র স্থাপন করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোদমে চালু হলে এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ প্রাপ্তিতে ভোগান্তি লাঘব, লো-ভোল্টেজ এবং লোডশেডিংয়ের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ উপ-কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পরও লামা, আলীকদম ও পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ও মানিকপুর ইউনিয়নের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের দুর্ভোগ একই রয়ে গেছে। একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানিয়েছে, অর্থবহ উদারতা দেখিয়ে পুরোপুরি কাজ শেষ না হওয়ার পূর্বেই ঠিকাদার থেকে অসম্পন্ন উপকেন্দ্র বুঝে নেয় লামা বিদ্যুৎ বিভাগ। এই উপকেন্দ্রে ৫ টি ফিডার লাইন রয়েছে। ফিডার লাইনগুলোতে ব্যবহৃত এসিআরগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না। যার ফলে একটি ফিডার লাইনে কোন সমস্যা হলে, সকল ফিডার লাইন এক যোগে সমস্যার সৃষ্টি করে। এতে করে পুরো এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ভোগান্তি পড়ে।
লামা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী অলিউল ইসলাম জানান, দোহাজারী থেকে লামা বিদ্যুৎ বিভাগের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। সেখান থেকেই লোডশেডিং করা হয়। এছাড়া পর্যাপ্ত ঢাল-পালা কাটার পরেও সড়কের পাশে তারের উপর বিভিন্ন সময় গাছরে ঢাল-পালা পড়ে লাইন বন্ধ হয়ে যায়। এসকল গাছের ঢাল-পালা কাটার জন্য নতুন করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। লামায় সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন