লামা-আলীকদমে পেঁপে চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা : প্রয়োজন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা

NewsDetails_01

লামা উপজেলার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের বৈদ্যভিটার পাহাড়ে সৃজিত পেঁপে বাগানে কৃষক সুলতান আহমদ
বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় পেঁপে চাষ করে দ্বিগুন লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। পাহাড়, পাহাড়ের ঢালু ও সমতল ভুমিতে পেঁপে চাষ হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিকর তামাক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অনেক কৃষকরা এখন ব্যাপক হারে পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় দিন দিন এ চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পেঁপে চাষের মাধ্যমে এতদ্বঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ক্ষতিকর তামাক চাষের কালো থাবা থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণদানের মাধ্যমে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন লামা ও আলীকদম উপজেলাবাসী।
সূত্র জানায়, আশির দশক থেকে আবাদি জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ হয়ে আসছে লামা ও আলীকদম উপজেলার ফসলি জমিতে। নগদ অর্থ ও বাজার জাতকরণের নিশ্চিত সুবিধা প্রদানসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। তামাক চাষে কিছু কৃষক লাভবান হলেও বেশিরভাগ কৃষক ক্ষতিকর এ তামাক চাষে একেবারে নি:স্ব হয়ে পড়েছে। তামাক চাষে শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি কৃষকদের নিকট ক্রমশ পরিস্কার হয়ে উঠতে শুরু করায় অনেক কৃষক এখন বিকল্প চাষাবাদ খুঁজতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় লামা ও আলীকদমের প্রায় সহস্রাধিক কৃষক সাম্প্রতিক সময়ে পেঁপে চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। তাদের দেখাদেখি অনেকে এ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। পেঁপে শুধুমাত্র ফল হিসেবে নয়, সবজি হিসেবেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এতে আছে প্রচুর ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, লামা ও আলীকদম উপজেলায় ২৭০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ হয়েছে। এছাড়া অনেকে শখের বশে দেশীয় জাতসহ বিভিন্ন জাতের পেঁপে চাষ করেছেন। এতদাঞ্চলে উৎপাদিত পেঁপের গুণগত মান ভালো ও সুস্বাদু হওয়ার কারণে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকা পেঁপে ও কাচা পেঁপের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যার ফলে এখানকার উৎপাদিত পেঁপে বহিরাগত ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত হয়ে আসছে। প্রতিদিন লামা-আলীকদম-চকরিয়া সড়ক, লামা-রুপসীপাড়া সড়ক, লামা সুয়ালক সড়ক, লামা-পূর্বচাম্বী সড়ক ও লামা গজালিয়া সড়কের দু’পাশে বসে মিনি পেঁপের হাট।
লামা পৌরসভার বড় নুনারবিল এলাকার সুলতান আহমদ জানায়, তামাক চাষে শরীরিক পরিশ্রম ও পুজি বেশি দিতে হয়। অনেক সময় লাভবান হওয়া যায়, আবার লাভ না হলে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হয়। তাই তামাক চাষ বাদ দিয়ে পেঁপে চাষ শুরু করেন তিনি। সুলতান আহমদ আরো বলেন, পরিবেশ ও প্রকৃতি অনুকুলে থাকলে আগামি বছরও সমপরিমাণ পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন। একই কথা জানালেন পাশের বৈদ্যবিটা কৃষক থোয়াই অং মার্মা।
এদিকে আলীকদম উপজেলার সীবাতলী এলাকার কৃষক উচাচিং মার্মা জানান, এক একর পাহাড়ি জমিতে রেড লেডি জাতের পেঁপে চাষ করেছেন তিনি। এতে তার দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি দুই লক্ষ টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন। চলতি বছর আরো ১ লক্ষ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন।
লামা পৌরসভার হরিণঝিরি পাড়ার কৃষাণী আনু মার্মানী জানান, পর্যাপ্ত জায়গা থাকার পরও মূলধনের অভাবে তিনি মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করে সামান্য পরিমাণ পাহাড়ি ঢালু জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি ৩০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করেছেন। তিনি লক্ষাধিক টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন। পেঁপে চাষে ঋণ সুবিধাসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি আগামিতে চাষের পরিমাণ আরো বাড়াবেন বলেও জানান তিনি।
তবে বেশ কয়েকজন স্থানিয় কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, এ চাষের ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের তেমন কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়না। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. কামাল উদ্দিন জানায়, সমতলে পাহাড়ে উৎপাদিত পেঁপের চাহিদা বেশি। যার কারনে পার্বত্য এলাকার অন্যান্য স্থানের ন্যায় লামা ও আলীকদমের কৃষকদের নিকট থেকেও পেঁপে ক্রয় করে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে থাকি। সেখান থেকে তারা চট্টগ্রামও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয়।
আলীকদম উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অভিজিত বড়ুয়া জানান, তার এলাকায় চলতি মৌসুমে ১৫০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ হয়েছে। লামা উপজেলার সহকারি কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা স্বপণ কুমার দাশ বলেন, উপজেলায় প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে রেড লেডি জাতের পেঁপে চাষ করা হয়েছে। পেঁপে চাষের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকেরা দ্বিগুণ–তিনগুণের বেশি লাভবান হচ্ছেন।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরে আলম জানান, এখানকার মাটি ও আবহাওয়া পেঁপে চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় পেঁপে চাষে কৃষকের আশানুরুপ ফলন হয়েছে। পেঁপে চাষীদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক ভাবে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন