রোয়াংছড়িতে এডিপি’র কাজ : কাজ না করেই বিল উত্তোলন

NewsDetails_01

রোয়াংছড়িতে ১২ বছর আগের পানি সরবরাহের এই কাজটিকে নতুন প্রকল্পের কাজ দেখিয়ে অর্থ উত্তোলন করা হয়।
বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সুপেয় পানি সরবরাহের প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর ক্ষোধ ঠিকাদার প্রকল্পের কোন কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে নিয়েছে, ফলে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।
২০১৬-১৭ অর্থ সালে এডিপি প্রকল্পে আওতায় রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নে জনস্বার্থে জনগণের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহের ও অনুমোদনকৃত ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রকল্প বাস্তবায়নে লক্ষ্যে রোয়াংছড়ি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) অফিসের অসাধুপায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে মনগড়া কোটাশনের মাধ্যমে রোয়াংছড়ি মেসার্স অথুইমং মারমা নামে লাইসেন্স দিয়ে কাজ নেন ঠিকাদার রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাহ্লামং মারমা। এলজিইডি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরকারি নীতি মোতাবেক স্থানীয় পত্রিকার বা জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোন নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে দীর্ঘ দিন ধরে অনিয়ম করে আসছে।
এলজিডি সূত্রে জানা গেছে, এসব অনিয়মে (সিও) সহকারি প্রকৌশলী মো: সাজেদুল ইসলাম সরাসরি জড়িত বলে এমন অভিযোগ উঠেছে। ওই কাজে তিনি দেখভাল করার দায়িত্ব ছিলেন। সাজেদুল ইসলাম প্রকল্পে কাজে বাস্তবায়ন ছাড়াই ঠিকাদার সাহ্লামং মারমা সাথে মিলে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, এলজিইডি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে আমরা সাধারণ জনগণ বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে ঝিড়ি-ঝর্ণার পানি পান করে ডায়রিয়া,আমাশয়,ম্যালরিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগ ভোগ করতে হচ্ছে।
এদিকে এলাকার লোকজন পানি সংকটে এমন অবস্থা দেখে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে দেখভাল দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম ও ঠিকাদার সাহ্লামং মারমা মিলে ইতোমধ্যে ঝিড়ির পানি সরবরাহকৃত পুরানো পাইপ লাইনকে সামান্য মেরামত দেখিয়ে প্রকল্পের ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়রা উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ পত্র দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন আভাস পাওয়া গেছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, তিনি সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যাপারে জানেন না, আমাদের কাছে কোন অবহিত করা হয়নি। আমাদের অফিসের মাধ্যমে ১০ বছর পূর্বে বাঘামারা ঝিরি থেকে সরবরাহকৃত পাইপ লাইনকে নতুন প্রকল্পের কাজ দেখিয়ে বিল ভাউচার করে অর্থ উত্তোলন করেন।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক আথুইমং মারমা বলেন, তার নামে অর্থ লোপাটের ব্যাপারটি তিনি জানেন না। তিনি আরো বলেন, আমি একজনকে দিয়ে ছিলাম লাইসেন্স। সাহ্লামং মারমাকে আমার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। আর শুনছি কাজ ছাড়াই বিলও উঠিয়ে নিয়ে গেছে। লাইসেন্সের মালিক হিসেবে আমার স্বাক্ষর নকল করে অর্থ তুলে নিতে পারেন বলে ধারণা করছি আমি। এদিকে এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার সাহ্লামং মারমা সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মুঠোই ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ক্যসাইনু মারমা ও রোয়াংছড়ি সদর ইউপির চেয়ারম্যান চহ্লামং মারমা বলেন, এ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের ব্যাপারে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বিশুদ্ধ পানির জন্য সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা সকলে মিলে ২০১৬-১৭ অর্থ সালে এডিপি প্রকল্পে আওতায় বরাদ্দ দাবি করে অনুমোদন পেয়েছি, তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারা কোন কাজ না করে সমস্ত বরাদ্দ টাকাগুলো উত্তোলন করে নিয়ে গেছে।
রোয়াংছড়ি এলজিডি’র সহকারি প্রকৌশলী সিও সাজেদুল ইসলাম বলেন,বিল পেমেন্টের আগে নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমরা কর্ম এলাকার পরিদর্শন করছি। প্রকল্প কাজ ৮০ ভাগ কাজ হয়েছে তাই বিল দেওয়া হয়েছে।
রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবীন্দ্র চাকমা বলেন, এ বিষয়ে তেমন কিছু আমি জানতাম না,আমাকে মিসগাইড করে প্রকল্প টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন