রুমায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে:র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল !

NewsDetails_01

আদিবাসী নৃত্য
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে: বা প্রবারণা উৎসব উপলক্ষে বান্দরবানের রুমায় শনিবার প্রবারণা‘র সমাপণি অনুষ্ঠানে এই প্রথমবারের মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না। এতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাছে হতাশা বিরাজ করছে।
ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে: উপলক্ষে সম্ভাব্য ব্যয় মিটানোয় সংগ্রহিত অর্থ সংকুলান না হওয়ায় সমাপণি দিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাদ দেয়ার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় উৎসব উদযাপণ কমিটি সভাপতি ও রুমা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা। তবে ফানুস উড়ানো ও রথযাত্রাসহ সীমিত পরিসরে আলোচনা সভা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সংশ্লিষ্টরা।
হেৃ আখ্রাং মোহ্ শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি মংমং মাষ্টার বলেন, ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে: এর সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং এটি মারমা সমাজের কাছে এক ঐতিহ্যও বটে। তাই তার সমমনাদের নিয়ে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার জন্য মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তত ছিলেন তিনি।মারমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা ঐতিহ্য হারিয়ে যাবার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে অংমেচিং মারমা বলেন, বিশেষ এইদিনে এসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চর্চা করা না হলে নতুন প্রজন্মের কাছে সাংস্কৃতিক চর্চা ও সংরক্ষণ হয়তো কোনো একদিন বিলীন হয়ে যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় উৎসব উদযাপণ কমিটি সদস্যদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলের কারণে গৃহিত কর্মসূচি পালন করতে কম প্রচারণা ও অর্থ সংকট দেখা দেয়।
সূত্রে জানায়, উদযাপণ কমিটি ব্যবস্থাপনা অসচ্ছতা ও ভিন্নমতাদর্শের রাজনীতির মনোভাব ঢুকে পড়ায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে: বা প্রবারণা উদযাপণেও ভাটা পড়েছে।
যুব সমাজের নেতৃত্বদানে থাকা কয়েকজন বলেন, চার বছর আগে দুই বছর মেয়াদে একটি কেন্দ্রীয় উৎসব উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতি করা হয় উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও রুমা সদর চেয়ারম্যান শৈমং মারমা শৈবংকে। সাধারণ সম্পাদক পদে জনসংহতি সমিতির সভাপতি লুপ্রু মারমা। রাজনীতি মতাদর্শ ভিন্নতার কারণে উৎসব উদযাপণের যে কোনো সিদ্ধান্ত প্রায় সময় মতপার্থক্য থাকে।
তাছাড়া গেল বছরগুলো ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে: আনন্দঘন পরিবেশে ও যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হলেও অনুষ্ঠান শেষে কোনো হিসাব নিকাশ প্রদর্শন করা হয়নি। একারণে কমিটির লোকজন অন্যদের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করে।
সাংস্কৃতিক কর্মী ঞোহ্লামং মারমা জানান, গত বছর সমমনা কয়েকজনের উদ্যোগে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে: উপলক্ষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মারমা ভাষায় নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। কায়িক পরিশ্রম বাদে আনুষাঙ্গিক অর্থাৎ যেটা নাহলে নয়, সেসব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খরচ এই উদযাপণ কমিটি দেয়া কথা ছিল, তা অর্ধেকও দেয়নি। এতে বিপাকে পড়ছি আমরা। এজন্য এই কমিটি লোকজনের প্রতি এলাকার অধিকাংশ মানুষ নাখোশ। তাই আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে কোনো টাকা দিচ্ছিনা, সহযোগিতাও করব না।
গত বছরে মঞ্চায়িত নাটকের সংশ্লিষ্ট থাকা উসাইমং মারমা বলেন, নাটকের জন্য জিনিসপত্র ক্রয়ে বাকী টাকা দিতে না পারায় দোকান মালিকের কাছে এখনো প্রতিনিয়ত অপমানিত হতে হয়েছে। এই উদযাপণ কমিটি যখন নতুনভাবে পুন গঠিত হবে।তখন সবক্ষেত্রে সহযোগিতা ও স্বত;স্ফূর্তভাবে অংশ নেব, এর আগে নয়। এমন কথা জানালেন যুবনেতা অংসাপ্রু, ঞোহ্লা মারমা, মংক্যচিং, মংক্যথুই ও মেমং সহ আরো অনেকে।
উৎসব উদযাপণ কমিটি অর্থ সম্পাদক উক্যসিং মাষ্টার জানান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে প্রায় সত্তর হাজার টাকা লাগবে। এখন জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে আসছেনা। এত টাকা কোথায় পাবো?
কমিটির সাধারণ সম্পাদক লুপ্রু মারমা উৎসব কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার কথা স্বীকার করে বলেন, এই ওয়াগ্যেয়াই পোয়ে: বা প্রবারণা উৎসব পরপরই নতুন কমিটি করে তাদের দায়িত্ব দিয়ে ফেলব।
কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক এদুজনই রাজনীতির মতাদর্শে ভিন্নতা ও অসচ্ছতার কারণে প্রধান ধর্মীয় উৎসব পালনে প্রতিবন্ধকতা বিষয়টি এড়িয়ে যান। এঅবস্থায় উৎসব শেষে এবারও কোনো হিসেব দেবে কিনা তাও সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন