বান্দরবান সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল

NewsDetails_01

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের কাটা তারের বেড়ার কাছে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে আর্তনাদ বাড়ছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের। ‘না খেয়ে মরলেও, গুলি খেয়ে মরতে রাজি নই’- বলেও মন্তব্য অনেক রোহিঙ্গা নাগরিক। মিয়ানমারের বিজিপির গুলিবর্ষণ আর নির্যাতন সইতে না পেরে এমন আর্তনাদ করছে তারা। ঘুমধুম পয়েন্টের ওপারে টেকিবনিয়া এলাকায় শনিবার মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচন্ড গুলিবর্ষণের শব্দ শোনা যায়। এ অবস্থায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলমানরা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছেন।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানায়, মিয়ানমারের সহিংতায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কাটা তারের বেড়ার কাছে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্যে করে বেপরোয়া গুলি চালিয়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি। এতে টেকিবনিয়া এলাকার মসজিদের এক খতিব মাওলানা এরশাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এছাড়াও মিয়ানমারের ফকিরাবাজার এলাকায় বিজিপি’র গুলিতে গুরুতর আহত আব্দুর রহিম (৭০) নামের এক লোক মারা যাওয়া কথা স্বীকার করেছে রোহিঙ্গারা। তাছাড়া চমেকে মুছা নামের এক গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা মারা গেছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলি, ঘুমধুম লাল ব্রিজ, তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্টে হাজার হাজার রোহিঙ্গা কাটা তারের ওপারে আর্তনাদ করছে। চিৎকার করে বলছে কোন রকম জীবন বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে তাদেরকে আশ্রয় দেয়া হোক। প্রয়োজনে না খেয়ে মরবে বাংলাদেশে, তারপরও মিয়ানমারের সেনা ও রাখাইনের নির্যাতন থেকে তাদের বাঁচানো হোক। এরকম আকুতি জানাতে শোনা গেছে এসব রোহিঙ্গাদের।
৩৪বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খাঁন জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত জুঁড়ে ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা গেছে শনিবার দুপুরে। এতে সীমান্তে অবস্থানকারী স্থানীয়রাও অজানা ভয়ভীতির ফলে পালিয়ে যাচ্ছে অন্যত্র। তারপরও বিজিবি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে।
ঘুমধুম বিজিবি’র নায়েক সুবেদার জাকির বলেন, সীমান্তের জলপাইতলি এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় প্রায় ৫শতাধিক রোহিঙ্গাদের আটক করে রাখা হয়েছে, তাদেরকে সুযোগ বুঝে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার আওতাধীন ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, সীমান্তে বিজিবি’র পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে প্রতিরোধে কাজ করছে। শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬৮জন রোহিঙ্গাকে অনুপ্রবেশের সময় আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলছে।
ঘুমধমু জলপাইতলি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যান্তরে চলে আসা টেকিবনিয়া এলাকার বাসিন্দা লোকমান হাকিম (৫০) ও তাঁর ভাই মোঃ নোমান (৪৫) বলেন, তারা স্ত্রী, পুত্র, জায়গা-জমি, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী ফেলে জীবন বাঁচাতে চলে এসেছে বাংলাদেশে।বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে বিজিবি’র হাতে আটক অবস্থায় রয়েছে তারা। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির গুলিতে তাঁদের এলাকার হাবিবুল্লাহ ছেলে মাওলানা এরশাদ মারা গেছেন।
একই এলাকার জয়নাল আবেদীন (৩৩) বলেন, শনিবার দুপুরে অতর্কিত অবস্থায় প্রচন্ড গুলির শব্দ পেয়ে সে স্ত্রী ছৈয়দা খাতুন (২৯), ছেলে হাসান (৭), মো. ইছা (৫), মেয়ে মাহিদা (২) কে নিয়ে কাটা তারের বেড়ার উপর দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করেছেন।
বয়োবৃদ্ধ শামারুব (৯০) অস্পষ্ট কণ্ঠে বলেন, দুপুরে ভাত খেতে বসলে শোনা যায় গুলি শব্দ। পরে তার ছেলে জামাল আহমদ তাকে কাঁধে করে নিয়ে এসে সীমান্ত পার করিয়েছে। তিনি হাঁটতেও পারেন না বলে জানান তিনি।
রেজু আমতলি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা মো. আলম জানান, তাদের গ্রামের আব্দুর রহিম নামের এক যুবক বিজিপির গুলিতে গুরুতর আহত হলে তার আত্মীয়স্বজনেরা বাংলাদেশে নিয়ে আসার সময় ওয়ালিদং পাহাড়ের চিককুম এলাকায় পৌছলে সে মারা যায়। বর্তমানে তাঁর মৃত দেহ বাংলাদেশের অভ্যান্তরে চিককুম এলাকায় রয়েছে বলে তিনি জানান।
অপরদিকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আহত মুছা ও মোক্তার নামে ২ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুছা নামের ওই রোহিঙ্গা মারা গেছেন বলে জানা যায়।

আরও পড়ুন