বান্দরবানের পাহাড়ে পাহাড়ে সবুজ কমলা’র ফলন

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা উপজেলার বাজারে আনা হয়েছে কমলা
বান্দরবান জেলার পাহাড় গুলোতে কমলার ফলন ভালো হওয়ার কারনে আদিবাসী চাষীরা বেশ খুশি। আর্থিক সচ্ছলতার অপার সম্ভাবনা দেখে পাহাড়িদের পাশাপাশি স্থানীয় বাঙালিরাও কমলা চাষে ঝুঁকছে। চলতি মৌসুমে জেলার ৭টি উপজেলায় ২ হাজার ৮০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। তবে পচনশীল এই ফলের যথাযথ সংরক্ষণাগার না থাকায় আর্থিক ঝুঁকিতেও রয়েছেন চাষীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানের পাহাড়ে দিন দিন কমলা চাষের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে, কদরও বাড়ছে কমলার। এখানকার পাহাড়ের মাটি, আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগি হওয়ায় এবার জেলায় ২৯ হাজার ১২০ মে.টন কমলা উৎপাদন হয়েছে। প্রতিদিনই এখানে উৎপাদিত কমলা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় পরিকল্পিতভাবে কমলা চাষ শুরু করা হয় বলে জানা গেছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বান্দরবানের ৭ উপজেলার মধ্যে লামায় ২৬০হেক্টর, আলীকদমে ৬০হেক্টর, নাইক্ষ্যংছড়িতে ১৫ হেক্টর, থানচিতে ১২৪০হেক্টর, রুমায় ৩২২হেক্টর, রোয়াংছড়িতে ১৩০হেক্টর ও সদর উপজেলায় ৬৩হেক্টর পাহাড়ি জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। এক সময় এখানের পাহাড়গুলোতে ফলদ, বনজ গাছের বাগান ও জুমের ব্যাপক আবাদ হত। বেশ কয়েক বছর ধরে কমলার অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছে বান্দরবান। এখানের অধিকাংশ পাহাড় এখন কমলার থোকায় ভরে উঠেছে। একজোড়া কমলা ৬ থেকে ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রীর কমলা চাষী ইয়ল লক ম্রো বলেন, আমাদের কমলা সাইজে যেমন বড়, তেমন মিষ্টিও তাই দেশীয় কমলার চাহিদা বাড়ছে।
সূত্র জানায়, দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় ৬শ’ কৃষক পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রকল্প হাতে নেয়ার মাধ্যমে পাহাড়ে কমলাসহ মিশ্র ফল চাষের প্রক্রিয়া আরম্ভ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি ছিল পার্বত্যাঞ্চলে ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষীদের কমলা ও মিশ্র ফসল চাষ। প্রকল্পে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানে ৬শ’ পরিবারের মাঝে ৬০০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। পরিবারদের মাঝে ৪৫০টি কমলা, ৯০০টি কফির চারা, ৪৫০টি পেঁপে, ১৫০০টি কলা এবং ৩ হাজার আনারস চারা দেয়া হয়। লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় পাহাড়িরা মিশ্র ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
লামার গজালিয়া ইউনিয়নের লেবু পালং এলাকার চিন্তাবর পাড়ার কমলা চাষী সোচিং মুরুং জানান, ৩ একর পাহাড়ে কমলা আবাদ করেছেন। একর প্রতি বীজ সংগ্রহ, চারা পলিব্যাগ করা, জায়গা পরিস্কার, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও ৫/৬ বছর পর কমলা ধরা শুরু করে। তিনি আরো বলেন, এক একর কমলা বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকার বেশি।
আরো জানা গেছে, বান্দরবানের রুমার ইডেন পাড়া, মুন্নম পাড়া, বেথেল পাড়া, এথেল পাড়া, বগালেক পাড়া, কৈক্ষ্যংঝিড়ি, পাইন্দু, রনিন পাড়া মুরংগ পাড়া, শঙ্খমনি পাড়া, থানচির এ্যাম্পু পাড়া, কুনাং পাড়া, জিনিংঅং পাড়া, মঙ্গী পাড়া, রোয়াংছড়ির বেতছড়া, গালেঙ্গ্যা, ঘেরাও, দোলিয়াম পাড়া, পোড়া পাড়া, লামার গজালিয়া, ফাঁসিয়াখালী, রুপসীপাড়া, লামা সদর ইউনিয়ন, আলীকদমের লাংদি মুরুং পাড়া, কলারঝিরি, কাইন্দালা ঝিরি পাড়া এবং জেলা সদরের স্যারন পাড়া ও লাইলুনপি পাড়া এলাকায় গড়ে উঠেছে সাড়ে তিন শতাধিকেরও বেশি কমলা আর মাল্টা বাগান। চলতি বছর জেলায় প্রায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে কমলা উৎপাদিত হয়েছে।
সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ উল আলম বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পরিবহন ও বাজারজাতকরণের সুবিধা না থাকায় ফড়িয়াদারদের কাছে দামমাত্র মূল্যে কমলা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে চাষীরা। বর্তমান বাজারে প্রতিটি কমলা ১০/১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা দুর্গম থেকে একশ কমলা কিনছে মাত্র চারশ থেকে পাঁচশ টাকায়।
বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ভবতোষ চক্রবর্তী জানায়, ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা রঙ আসার আগেই থোকায় থোকায় ছোট কমলা ছিড়ে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে উৎপাদিত কমলার স্বাদ অনেক কমে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কমলাগুলো বড় হওয়ার সুযোগ দিলে এবং সঠিক পরিচর্যায় কমলা বাগান সংরক্ষণ করা গেলে একদিন কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত হবে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলা।

আরও পড়ুন