দেশের সুউচ্চ সড়কে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তৎপর : আতংকে পর্যটকরা

NewsDetails_01

Bandarban-news-pic-(2)--17-4-2016দেশের সবচেয়ে উচুঁ সড়ক বান্দরবানের থানছি-আলীকদম সড়ককে ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছে দেশীয় একাধিক শসস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ। খুন, অপহরণ, চাদাঁবাজি এমন কোন ঘটনা নেই তারা করছেনা। যারা ফলে এই সড়কে ভ্রমনে যাওয়া পর্যটকদের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্র সমতল থেকে আড়াই হাজার ফুট উঁচুতে ১৯৯১ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থানছি- আলীকদম সড়কের কাজ শুরু করে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন ১২০ কোটি টাকা ব্যায়ে সড়কটির নির্মাণ করে। গত বছরের ১৪ জুলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কটি উদ্ভোধন করে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। এরপর থেকে মূলত উক্ত সড়কে বাড়তে থাকে পর্যটকদের আনাগোনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উদ্ভোধনের পর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠায় ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের একটি শসস্ত্র গ্রুপ অপরাধ মূলক কর্মকান্ড বাড়িয়ে দেয়। গত শনিবার দুপুরে উক্ত সড়কের ২৮ কিলোমিটার এলাকায় মোটরসাইকেল যোগে গরু কিনতে যায় সাহাবুদ্দিন, আবু বক্কর ও আবছার আলী। এসময় মটরসাইকেল থেকে নামিয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের অপহরণ করে, তারা দুইদিনেও উদ্ধার হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ জন ত্রিপুরা নামে এক যুবককে আটক করেছে।
থানছি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এমএনপি নয়, অপহরণের ঘটনাটি ত্রিপুরাদের একটি গ্রুপ করেছে বলে আমরা জেনেছি।
আরো জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর একই সড়কে একটি দেশীয় এলজি এবং চিং লং ম্রোসহ দুই সন্ত্রাসীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা জেলার থানছি উপজেলার বাসিন্দা। বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রতিপক্ষের গুলিতে এমএনপির এই দুই সন্ত্রাসী নিহত হয়। ১ লা জানুয়ারি কাঠ শ্রমিক বোরহান উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ, তাকে অপহরণ করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এর একদিন পর সড়কটির ১৩ কিলোমিটার এলাকা থেকে ম্রো ন্যাশনাল পার্টির (এমএনপি) এক সদস্যের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এমএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের কারণে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সিং ইয়ং ম্রো বলেন, আমরা শুনেছি এখানে সন্ত্রাসীরা তৎপর, কিন্তু কোন গ্রুপ তৎপর তা জানিনা।
দেশের সবচেয়ে উচুঁ সড়ক হওয়ার কারনে সড়কটি পাশের মনোরম পর্যটন স্পট ডিম পাহাড় দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসলেও সম্প্রতিক সময়ে খুন অপহরণ বেড়ে যাওয়ার কারনে পর্যটকের আগমন অনেক কমে গেছে। বান্দরবানের বিভিন্ন স্পটে পর্যটকরা ভ্রমন করলেও নিরাপত্তা না থাকায় ভয়ে এখন আর পর্যটকরা সড়কটিতে ভ্রমনে যাচ্ছেনা।
এই ব্যাপারে ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আলমগীর হোসেন জানায়, উচুঁ সড়ক দেখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু নিরাপত্তার জন্য সড়কটি দেখার স্বাধ না মিটিয়ে চলে যাচ্ছি।
গত বছরের ৫ নভেম্বর বান্দরবানের আলীকদমের দুর্গম কুরুকপাতায় শসস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ এমএনপি ৭৯ সদস্য ৫৫টি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করে। ২০১১ সালে ম্রো আদিবাসী যুবকদের নিয়ে এমএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশীয় ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আলীকদমের পোয়া মুহুরী ও কুরুকপাতা এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড শুরু করে পরে জেলার থানছিতেও তারা তাদের কার্যক্রম চালায়। ২০১২ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এমএনপির ৩৭ জনেরও বেশি সদস্য গ্রেফতার হয়।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক বলেন, এই সড়কে অপহরণের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, সেখানে পুলিশ, বিজিবি তৎপর আছে, পর্যটকদের নিরাপত্তার কোন সমস্যা হবেনা।

আরও পড়ুন