থানচি এলজিইডি’র কর্মচারী রোকন যখন কোটিপতি ঠিকাদার

NewsDetails_01

বান্দরবানের থানচি এলজিইডি’র কর্মচারী রোকন
একজন রোকন মিয়া,সরকারী চাকরীর সূত্রে পরিচয় বান্দরবানের থানচি এলজিইডি’র একজন কর্মচারী, কিন্তু স্থানীয় ঠিকাদার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে তার পরিচয় কোটিপতি ঠিকাদার হিসাবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, থানচি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল (এডিপি) ও পিআইসি প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ন্ত্রন, ঠিকাদার নিয়োগের লবিং, দাপ্তরিক গোপনীয় ফাইল চিঠি পত্র সই স্বাক্ষর ও জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তাদের সাথে যোগাযোগে একমাত্র ঠিকানা ও ভরসাস্থল যেন ৪র্থ শ্রেনীর এই কর্মচারী রোকন মিয়া।
আরো জানা গেছে, এলাকায় স্থানীয়দের মাঝে তিনি পরিচিত এলজিইডি’র প্রধান কর্তা, অন্যদিকে নিজেই ঠিকাদারি কাজ করার কারনে কোটিপতি ঠিকাদার নামে বেশ সুপরিচিত। থানচি উপজেলার অধিকাংশ কাজ তিনি নামে-বেনামে বাঘিয়ে নিয়ে কাজ করেন নিজেই। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা তার ব্যবসায়িক অংশিদার। এরই সুবাদে তার নামে বেনামে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাবর-অস্থাবর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি।
জানা যায়, ১৯৮৭ সালে মোহাম্মদ রোকন মিয়া থানচি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে ৪র্থ শ্রেণীর ইলেক্ট্রেশিয়ান পদে যোগদান করেন। স্বাধীনতা পর থেকে বিদ্যুৎ পৌছেনি থানচিতে। ফলে সরকারীভাবে উপজেলা ইলেক্ট্রিশিয়ান পদ থাকলেও এই পদের কোন কাজ নেই।
থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নের বাসিন্দা হাম বাহাদুর বলেন, রোকন আমাদের এখানে ঠিকাদারি অনেক কাজ করেছে, সে তো ঠিকাদার, সরকারী চাকরীও করে নাকি ?
ঠিকাদারদের অভিযোগ, বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল (এডিপি) ও পিআইসি প্রকল্পের অধিকাংশ উন্নয়ন কাজ টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি অন্তত ২টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশের নির্দেশনা থাকলেও প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগীতায় ম্যানেজ করে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই কাজগুলো হাতিয়ে নেন তিনি। ২০০৯-১০ সালে প্রথমবারের ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উপায়ে রেমাক্রী,তিন্দু ও থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ কাজ হাতিয়ে নেন। ২০১৪ সালে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী এসব এলাকা পরির্দশন করলে ভবনগুলো নিন্মমানের হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এই ব্যাপারে থানচি এলজিইডি’র কর্মচারী রোকন মিয়া বলেন, এতদিন কাজ করে এসেছি কিছু হয়নি, আমর চাকরীর ৩ বছর আছে, নিউজ না করার জন্য অনুরোধ করছি।
আরো জানা গেছে, নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচ্চ প্রর্যায়ে ৮ বছরে ৮বার তদন্ত করেছেন। রোকন মিয়া বা পরিবারের নামে ঠিকাদারী লাইসেন্স না থাকলেও অন্যজনের নামে কাজ নিয়ন্ত্রন করে ঠিকাদারী কাজ করেন তিনি। ফলে ক্ষোধ স্থানীয় ঠিকাদাররা কোন প্রকল্পে কাজ না পাওয়ায় অসন্তোষ বিরাজ করছে ঠিকাদারদের মধ্যে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র পাহাড়বার্তাকে জানায়, থানচির কর্মস্থলে টানা ২৯ বছর কর্মরত থাকার কারনে তিনি বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ করেন। তিনটি ইউপি ভবন ছাড়াও থানচি বাজার থেকে জিনিংঅং পাড়া রাস্তায় শাহজাহান ঝিঁড়িতে সেতু নির্মাণ, অফিসার ক্লাব নির্মাণ, বর্তমানে অস্তিত্বহীন, কর্মচারীদের কোয়াটার নির্মাণ, ডরমেটরি ভবন সংস্কার,ক্যচু পাড়া সরকারি প্রার্থমিক বিদ্যালয় ভবন,বড় মধক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, জ্ঞানলাল পাড়া ঝুলন্ত ব্রীজ নির্মাণ,সেগুম ঝিঁড়িতে ঝুলন্ত ব্রীজ নির্মাণ,বর্তমানে বিলুপ্ত,দলিয়ান পাড়া স্কুল ভবন নির্মাণ, কর্মচারী ক্লাব ঘর নির্মাণ,রেমাক্রী বাজারের সিঁড়ি নির্মাণ, বলিপাড়া হাই স্কুল ভবন সংস্কার, রেমাক্রী ইউপি ভবন নির্মাণসহ ৪ শতাধিক প্রকল্পের অধিকাংশই নির্মাণ কাজে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করেন ঠিকাদার তথা এলজিডির কর্মচারী রোকন মিয়া।
সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, ১৯৭৯ এর বিধির ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে সরকারি কার্য ব্যতীত অন্য কোনো ব্যবসায়ে জড়িত হতে অথবা অন্য কোনো চাকরি বা কার্য গ্রহণ করতে পারবেন না।’ সূত্র জানায়, এসব বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (আপিল ও শৃঙ্খলা) বিধিমালা ১৯৮৫-এর অধীনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এই ব্যাপারে সহকারি ইঞ্জিনিয়ার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন ভূঁঞা বলেন, আমি নতুন যোগদান করছি, সে পুরাতন কর্মচারী বলে তাকে একটু বেশী কাজে লাগায় ।
এদিকে স্থানীয়রা মনে করছে, এই ব্যাপারে তদন্ত্র পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে সরকারী অন্য কর্মচারীরাও নিজের কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন না করে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে যাবে।

NewsDetails_03

প্রিয় পাঠক, বান্দরবানে এই ধরণের অনেক সরকারী চাকুরীজীবি আছেন, যারা কর্মস্থলে যথাযথ দায়িত্ব পালন না করে ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত, যা সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা অনুসারে অবৈধ। এই ধরণের কর্মকান্ডে কেউ জড়িত থাকলে তথ্য-প্রমান জানান আমাদের। আমরা প্রকাশ করবো তাদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন। ই-মেইল পাঠানোর ঠিকানা। [email protected]

আরও পড়ুন