জলকেলিতে মাতোয়ারা বান্দরবানের আদিবাসীরা

NewsDetails_01

বান্দরবানের জলকেলি উৎসব উদ্ভোধন করছেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি
বান্দরবান পার্বত্য জেলার মারমা সম্প্রদায় তাদের নব বর্ষবরণ উৎসব “সাংগ্রাই ” এর জলকেলীতে মেতে উঠেছিল। শনিবার বিকালে জেলা শহরের রাজার মাঠ ও রেইছা এলাকাসহ জেলার সবকটি উপজেলায় জলকেলিতে মেতে উঠে তারা।
মারমা আদিবাসীদের এই জলকেলি উৎসব পাহাড়ী-বাঙালির মিলন মেলায় পরিনত হয়। দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে পর্যটকরা। শহরের রাজবাড়ীর মাঠে জলকেলি উৎসবে যোগ দিয়ে বিকাল থেকে দলে দলে মারমা তরুন-তরুণীরা নির্ধারিত মঞ্চে অবস্থান করে। এ সময় চারিদিকে মারমা সঙ্গীতের মূর্ছনা ছড়িয়ে পরে।
তরুণীদের সামনে বিভিন্ন পাত্রে বা জলাধারে জল রাখা থাকে। তরুণেরা জলভর্তি পাত্র নিয়ে দলে দলে এসে ‘সাংগ্রাইংতে মিলে মিশে পানি খেলা খেলি ও ভাই সকলে ও বোন সকলে এসো একত্রে আনন্দ করি’। লেঃ লেঃ লেঃ.. লেঃ .. মংরো মংরোঃ.. মংরো মংরো, পেং পাদাউশে পোওয়াংরে লা সাংগ্রে, ক্যালোঃ মংরো প্যয়ে, (রাঙা পুস্প শোভিত এ মাসে আত্মহারা হয় সাংগ্রের আনন্দে এই শুভ দিনে তুলনাহীন তুমি, প্যন্ডেলে বসে স্বাগত জ্বানাও, সাংগ্রেং এর জল হীম শীতল সুন্দরী তুমি অপূর্ব) শহরের অলিতে-গলিতে এই ধরনের গান গেয়ে আদিবাসীরা এক অপরকে পানি বর্ষন করে জলকেলী বা পানি উৎসবে মেতে উঠে। এসময় বিদেশীরাও পানি খেলায় মেতে উঠে।
এক একজন তরুণ একজন তরুণীর দেহে জল ছিটায়। আর ঐ তরুণীও ঐ তরুণের দেহে পাল্টা জল ছিটিয়ে তার প্রতি উত্তর দেয়। এভাবে তরুণ- তরুণীরা পানি ছিটানোর মাধ্যমে জলকেলীতে মেতে উঠে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাসহস্থানীয় আদিবাসী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জলকেলিতে মাতোয়ারা বান্দরবানের আদিবাসী তরুনতরুণীরা
এসময় হাজার হাজার পাহাড়ী-বাঙালী জলকেলি উপভোগ করে। তাছাড়া কুস্তি খেলা, গিলা খেলা, কড়ি খেলা ও লাাটিম খেলার আয়োজন করা হয় সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে। সন্ধ্যায় মারমা আদিবাসীদের বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠেী গান পরিবেশন করে উৎসব অঙ্গনকে মাতিয়ে রাখে। রাতভর চলে আদিবাসীদের ঘরে ঘরে পিঠা তৈরীর উৎসব।
জলকেলি উৎসবের মধ্যে দিয়ে মারমা তরুন-তরুণীরা তাদের পছন্দের প্রিয় মানুষকে বেছে নেয়। রবিবারও জেলা জুঁড়ে জলকেলিতে মেতে থাকবে তরুন তরুনীরা। পুরাতন বছরকে পেছনে ফেলে আসে নতুন বছর, আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পাহাড়ের আদিবাসী পল্লীর মারমা আদিবাসীরা আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠে সাংগ্রাই উৎসবকে কেন্দ্র করে।
পাহাড়ের আদিবাসীরা ভিন্ন ভিন্ন নামে বর্ষবরণের এই উৎসব পালন করে থাকে। ত্রিপুরাদের বৈসুর (বৈ), মারমাদের সাংগ্রায়ের (সা) চাকমাদের বিঝুর (বি) থেকে বৈসাবি হলেও বান্দরবানের মারমারা বর্ষবরণের এই উৎসবকে সাংগ্রাই বলে থাকে। ১৬ এপ্রিল রাতে পাঁচদিনব্যাপি মূল অনুষ্ঠানের ইতি টানা হলেও জেলার উপজেলাগুলোতে ১৭ এপ্রিল শেষ হবে সাংগ্রাই অনুষ্ঠান।

আরও পড়ুন