আদিবাসী দিবস কি ? জানেন না প্রান্তিক আদিবাসীরা

NewsDetails_01

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার বাঘমারা এলাকায় বাসিন্দা
কালামায়া তঞ্চঙ্গ্যা, ঘরে তার দুই ছেলে এক মেয়ে । তিন সন্তানই পড়ছেন জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে । ২০ বছর আগে রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি থেকে বান্দরবানে বালাঘাটায় এসে বসবাস শুরু করেন । আর গত বছর জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার বাঘমারা এলাকায় পাহাড়ের উপরে টিন শেড এক চালা ঘরে বসবাস করছেন স্বামী-সন্তান নিয়ে কিন্তু গত ক’দিন আগে ব্যাধিতে মারা গেছেন তার স্বামী । তাই এতদিনের হাসি মাখা মুখটি ফ্যাকাসে এখন, অনেকটাই নিষ্প্রভব ।
তবুও আদিবাসী দিবসের কথা বলতেই একটু ভ্রু কুচকেই চুলোয় আগুন দিতে দিতে আধো আধো গলায় পঞ্চান্ন বছর বয়সি কালামায়া বললেন ‘‘ আমি খেটে খাওয়া মানুষ । চাষ-বাস করে খাই । ওইসব আদিবাসি দিবস কি জানি না, শুনি নাই । অধিকার কি তাও জানি না ।’’
কালামায়া’র মত এরকম পাহাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনেকে জানে না আদিবাসী দিবস কি? কি তাদের অধিকার ? আর পার্বত্য শান্তি চুক্তির গুরুত্ব বা কি ?
রোংয়াংছড়ি উপজেলার নতুন পাড়া এলাকার ইউনিসেফ পরিচালিত পাড়া স্কুলের শিক্ষক হ্লা চ ইয়ন বলেন, র‌্যালীতে যায়, সভায় অংশগ্রহণ করি ঠিকই, কিন্তু দিবসের গুরুত্ব কি সেটা সুস্পষ্ট কোন ধারণা নেই । আগে জানতে হবে তারপরই তো আমরা আন্দোলন করতে পারব ।
রোংয়াংছড়ি উপজেলার নতুন পাড়া এলাকার আরেক বাসিন্দা ব্যবসায়ি রে হ্লা অং বলেন, এসব অধিকার সম্পর্কে আমাদের জানা নেই । আমাদের তো আগে জানতে হবে । দুর্গম এলাকাগুলোর মানুষ তো অধিকার, দিবস এবং শান্তি চুক্তি সর্ম্পকে জানে না ।
ঔপনিবেশিক সময়ে শতাব্দীকাল ধরে বৈষম্য-নিপীড়ন ও জাতিগত আগ্রাসনে ৭০ টি দেশে প্রায় ৪০ কোটি আদিবাসির জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিলুপ্ত হয়ে যায় কোনো কোনো আদিবাসীর অস্তিত্ত । এই কারনে আদিবাসীদের সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘ ১৯৯৩ সালে আদিবাসী বর্ষ ও ১৯৯৪ সালে ৯ আগস্টকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। পাশাপাশি জাতিসংঘ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রও প্রণয়ন করেছে।
এর আগে আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষন ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বে নিয়ে আসার জন্য ১৯৯৫-২০০৪ সালকে প্রথম আদিবাসী দশক ও ২০০৫-২০১৪ সালকে দ্বিতীয় আদিবাসী দশক ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের আদিবাসী জনগণকে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বলা হয়েছে। আর আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিতে পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন সময়ে হয়েছে সভা-সমাবেশ। জাতীয়ভাবে এ দিবসটি পালিত না হলেও প্রতিবছর এই দিনে দিবসটি নানাভাবে পালন করে থাকে সমতল ও পাহাড়ে থাকা ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী । তবে এই দিবসের তাৎপর্যতা কি সে বিষয়ে জানা নেই খোদ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ।
এ বিষয়ে প্রশ্ন রাখতেই বান্দরবান আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটি’র আহ্বায়ক লেলুং খুমী বলেন, আমরা নিজেরা যারা আদিবাসী বলে দাবি করি, আমরা সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায়ে এই আন্দোলন অব্যহত রাখব । এছাড়াও যারা আমাদেরকে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী বানিয়েছে তাদের সর্ম্পকে পার্বত্য জেলায় প্রান্তিক জায়গায় বসবাসকারী আদিবাসীরা জানে না । তারপরও আমরা যারা এসব বিষয়ে সচেতন আছি, প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা মেসেজ দিতে চাই আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে ।
তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, সরকার সংখ্যালঘু, সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে । তাই সরকার সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে । আমরা আশা করব এই সরকার ভুল বিভ্রান্তি বুঝতে পেরে অন্যান্য দেশের মত আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিবেন ।

আরও পড়ুন