লামায় থেমে নেই পাহাড় কাটা

NewsDetails_01

লামা পৌর এলাকার নুনার ঝিরিতে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়
বান্দরবানের লামা উপজেলায় প্রতি দু’এক বছর পর পর পাহাড় ধস ট্রাজেডিতে মানবিক বিপর্যয়ের পরও থেমে নেই পাহাড় কাটা। বাড়িঘর নির্মাণ, মৎস্য চাষ, ইটভাটাসহ কারণে অকারণে পরিবেশ আইনকে অমান্য করে বিভিন্ন স্থানে চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। ফলে আবারও যে কোন মুহুর্তে জেলার লামা উপজেলায় ভয়াবহ পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লামা পৌরসভা এলাকার নুনারঝিরিতে বসতঘরের পাশে আশক আলীর ছেলে হিরণ মিয়া, আজিম উদ্দিন কোন ধরণের অনুমতি ছাড়াই গত কয়েকদিন ধরে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটছেন। স্থানীয় প্রশাসন যেন আঁচ করতে না পারে সেজন্য দেয়া হয়েছে বাড়ির চারপাশে ঘেরাবেড়া। পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও বুঝার কোন কায়দা নেই যে, ভিতরে নিরবে পাহাড় কাটা হচ্ছে।
পাহাড় কাটার বিষয়ে অভিযুক্ত আজিম উদ্দিন বলেন, পাহাড় কাটছিনা, একটু ছেঁটে দিচ্ছি।
আরো জানা গেছে, একটু ভারীবর্ষণেই ধসে পড়তে পারে সেই কর্তনকৃত পাহাড়,ঘটতে পারে মারাত্মক বিপর্যয়। এছাড়া কর্তনকৃত পাহাড়ের মাটি পড়ে ভরাট হচ্ছে পাশ দিয়ে বয়ে চলা প্রাকৃতিক ঝিরি। পরিবর্তন হচ্ছে এ ঝিরির পানি প্রবাহের গতিপথ। এর বিরুপ প্রভাবে দেখা দিয়েছে ঝিরির তীরবর্তী ফসলি জমিতে ভাঙ্গন ও জলাবদ্ধতা। বাঁশ গাছ কুপিয়ে ভাঙ্গন টেকাতে চেষ্টা করছেন জমির মালিক।
অপরদিকে,লামা পৌরসভা এলাকার একটি চক্র মাটি ব্যবসায়ীদের সাথে আতাত করে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে। বিক্রিত মাটি ট্রাক্টর দিয়ে পরিবহণের ফলে এলাকার সড়কগুলো দিন দিন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে বলে স্থানীয় মইনুল হোসেনসহ অনেকে অভিযোগ করেন।
স্থানীয়রা জানান, নুনার ঝিরির আশক আলীর ছেলেদেরকে পাহাড় কাটতে নিষেধ করলেও তিনি কোন কথা আমলে না নিয়ে পাহাড় কাটেন। যে হারে পাহাড় কাটা হচ্ছে, তাতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রাসহ পরিবেশবাদীরা। শুধু এসব স্থানেই নয়, একইভাবে পৌর এলাকাসহ উপজেলার রুপসীপাড়া, গজালিয়া, লামা সদর, ফাইতং, ফাঁসিয়াখালী, সরই ও আজিজনগরের বিভিন্ন স্থানে এক যোগে প্রায় শতাধিক স্থানে পাহাড় কাটা চলছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এসব পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরকে কোন ধরণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছেনা। ফলে নির্বিঘ্নে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে দুই শতাধিক পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী মহল দিনের পর দিন পাহাড় কেটে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে শতভাগ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এখানে পাহাড় কাটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় মারাত্নক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
লামা উপজেলায় পাহাড় ধস শুরু হয়েছে ১৯৯৯ সাল থেকে। ওই বছর আগস্টে আজিজ নগরে চিউরতলী এলাকায় এক রাতে শতাধিক পাহাড় ধসে পড়ে। সেখানে তিনজন নিহত ও ১২ জন আহত হন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে ২০০৯ সাল থেকে। ওই বছর আজিজনগরে তিন পরিবারের ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে লামা ফাইতং ইউনিয়নে এক পরিবারের ১১জনসহ ২৯ জন নিহত হন। এ ছাড়া ২০১১ ও ২০১৩ সালে দুজন করে ও ২০১৪ সালে তিনজনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই রাতে বসতঘরে পাহাড় ধসে পড়ে লামা সদর ইউনিয়নের হাসপাতাল পাড়ায় ৬ জনের মৃত্যু হয়।
২০০২ সালের ১১ মার্চ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জারি করা গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ। একই মন্ত্রণালয় ২০০৭ সালের ১০ জুলাই পাহাড় কাটা যাবে না মর্মে আরও একবার প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু বান্দরবানের লামাসহ ৭টি উপজেলার প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড়।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খিনওয়ান নু বলেন, পাহাড় কর্তনকারীদের কোন ভাবেই ছাড় নয়, এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্প্রতি বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের। তাই পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পরিবেশবাদীরা।

আরও পড়ুন