বীর বাহাদুরের প্রচেষ্টায় লামায় লাল সবুজের বাড়ী পেয়ে খুশি অসহায় মুক্তিযোদ্ধা হেলু মিয়া

NewsDetails_01

লামায় নব নির্মিত লাল সবুজের ‘বীর নিবাস’
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে দেশ, জাতি ও মানবকল্যাণে ঝাঁপিয়ে পড়া অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধার সম্মানার্থে ও কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার স্বরুপ ‘বীর নিবাস’ নামে একটি লাল সবুজের বাড়ি উপহার পেলেন বান্দরবানের লামা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হেলু মিয়া। শেষ বয়সে লাল সবুজের সরকারী বাড়ি পেয়ে এখন মহাখুশি এ মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হেলু মিয়া উপজেলায় পূর্নঃবাসিত হয়ে একটি বাঁশের ঝুপড়ি ঘরে স্ব-পরিবারে বাস করতেন। ‘বীর নিবাস’ বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধনে এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্মান করেছে।
সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতা আসার পর দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, বিশেষ করে দরিদ্র ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে থাকেন। এ ধারাবাহিকতায় সরকার মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গঠনসহ ধাপে ধাপে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিবৃদ্ধি ও দু:স্থ-যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেন। ২০০১ সালে বিষয়টি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জালে পেছিয়ে যায়। ২০০৯ সাল থেকে আবার বর্তমান জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে ধারাবাহিক উন্নয়ন শুরু করেন ৭১ এর রণাঙ্গনের মুক্তিসেনা ও তাদের ত্যাগের ফসল স্বাধীন সোনার দেশ গড়ার।
আরো জানা গেছে, ২০১৩ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরূপ ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের কাজ শুরু করে। বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ এলজিইডি গত অর্থ বছরে সাড়ে নয় লাখ টাকা বাড়িটি নির্মাণের দরপত্র আহব্বান করেন। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বাড়ীটির কাজ পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সম্রাট কন্সট্রাকশন। ৫০০ বর্গফুটের বীর নিবাসে রয়েছে- দুইটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি বারান্দা, একটি টয়লেট ও একটি টিউবওয়েল এবং গৃহের বাইরে একটি পাকা উঠান, একটি গোয়ালঘর ও একটি পোলট্রি শেড।
স্থানীয়রা জানায়, ২ ছেলে, ২ মেয়ে ও এক স্ত্রী নিয়ে বীর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হেলু মিয়ার সংসার। শহরের হোটেল রেস্তোরাগুলোতে পানির ভার বহন করে খেয়ে, না খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। তার এ খারাপ অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সচিত্র সংবাদও প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদগুলো পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরের নজর কাড়ে। শেষে মুক্তিযোদ্ধা হেলু মিয়াকে দালান ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর।
সরেজমিনে লামা পৌরসভার চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. হেলু মিয়ার বাড়িতে গেলে চোখে পড়ে সদ্য নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া লাল-সবুজ রং করা ‘বীর নিবাস’। ‘বীর নিবাস’ নিয়ে কথা হয় এ মুক্তিযোদ্ধার সাথে। তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে ভাঙ্গাচুড়া ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছি। বাড়ি উপহার পাওয়ায় শেষ বয়সে হলেও তার দুঃখ-কষ্ট দূর হয়েছে। এখন আমি ভীষণ খুশি পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মো. মোবারক হোসেন বলেন, চলতি মাসে বীর নিবাসের কাজ শেষ হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা হেলু মিয়াকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন তিনি ওই নিবাসে স্ব পরিবারে বসবাস করছেন। লামা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মাহাবুবুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর এহেন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিনওয়ান নু বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রথম পর্যায়ে পাকা ঘর নির্মাণ কাজ শেষ। উপজেলায় আরো অনেক অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে, আগামীতে তাদের জন্য বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের রেশন-ভাতা, সন্তানদের লেখাপড়া, চাকুরীসহ বিভিন্ন প্রকার আর্থিক সহযোগীতার পাশাপাশি বাড়িও উপহার দিচ্ছেন। এ প্রাপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা হেলু মিয়াও একজন সৌভাগ্যবান।

আরও পড়ুন