নাইক্ষ্যংছড়িতে ১ শিক্ষকের সরকারী স্কুল

NewsDetails_01

রাঙ্গাঝিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের রাঙ্গাঝিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে মাত্র এক শিক্ষক দিয়ে। শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন বই-খাতা হাতে ও স্কুল ড্রেস গায়ে খাল সাঁতরে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসলেও শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা অর্জন করতে পারছেনা তারা।
প্রতিষ্ঠানটির সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় ২০১৩-১৪ইং অর্থ বছরে বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়। উপজেলার এই বিদ্যালয়টিও তার আওতাভূক্ত। দূর্ঘম জনপদ হলেও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫২ জন। ৫ শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদ রয়েছে শূণ্য, ডেপুটেশনে আছে ২ জন শিক্ষক, পিটিআই প্রশিক্ষনে আছে ১ শিক্ষক, বর্তমানে কর্মরত আছেন ১ সহকারি শিক্ষক। আর এই একমাত্র শিক্ষককে দিয়ে চলছে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খালের দু’পারেই নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের রাঙ্গাঝিরি এলাকা। পশ্চিম পার্শ্বে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পূর্ব পার্শ্বে পাহাড়ের সৃষ্ট মাঝারী মানের খাল। ওপারের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর প্রতিদিন খাল পাড়ি দিয়ে এপারে সুন্দর পরিবেশে নির্মিত বিদ্যালয়ে পড়তে আসতে হয়। খাল পেরিয়ে আসতে অনেকের বই-খাতা ভিজে যাচ্ছে আবার অনেকের স্কুল ড্রেস,তাছাড়া পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ার আশংখা রয়েছে। স্কুলে নেই শিক্ষক তবুও তারা ছুটে আসে বই খাতা নিয়ে শিক্ষা অর্জন করবে বলে।
বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক লুৎফুর রহমান জানান, বিদ্যালয়টি দূর্গম এলাকায় নির্মিত , বর্ষা মৌসুমে খালে পাহাড়ী ঢলে স্কুলে যাতায়ত অসম্ভব হয়ে দাড়ায়। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খালটি পার হয়ে বিদ্যালয়ে যায়। তাছাড়া প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকগন না থাকায় সব দায়িত্ব আমাকেই পালন করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের নদী পার হতে গিয়ে পাঠ্যবই ও কাপড়-চোপড় ভিজে যায়। ওই ভেজা কাপড় নিয়েই শিশুরা ক্লাস করে। একেতো শিক্ষক নেই খাল পারাপারের কোন মাধ্যম না থাকায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও চিন্তিত।
বিদ্যালয়টির ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোজিনা আক্তার জানায়, বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে কোমর সমান পানি ডিঙ্গিয়ে স্কুলে যায়। তবে বৃষ্টি বেশী হলে খালে পানি ভরপূর থাকে। সে সময় বিদ্যালয়ে যাওয়া হয় না।
বর্ষা মৌসুমে খালের পানির তোড়ে ভেসে যাওয়ার আশংখায় ওপারের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে তেমন আসতে পারেনা। যার প্রভাব পড়ছে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়। একদিকে শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষা অর্জন করতে আসা এমন ভোগান্তি দেশের কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছে বলে জানা নেই স্থানীয়দের। শত শত শিক্ষার্থীর আকুতি উক্ত খালে একটি ব্রীজ নির্মাণ হউক। তাহলেই তারা নির্ভিঘ্নে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে পারবে।
শিশু শিক্ষার্ত্রীর এক অভিভাবক মো. রিদু আলম বলেন, শিক্ষক সংকট নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এবং ব্রিজ নির্মানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর সু- দৃষ্টি কামনা করছি।
নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলম জানিয়েছেন, সহসা উক্ত খালে ব্রীজ নির্মাণ হচ্ছে না। তাই শিক্ষার্থীদের পারাপারের সুবিধার্থে নৌকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তবে শিক্ষক সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা কামনা করছি।

আরও পড়ুন