দূর্নীতির বরপুত্র রোয়াংছড়ি এলজিডি’র উপজেলা প্রকৌশলী মহিউদ্দিন !

NewsDetails_01

রোয়াংছড়ি এলজিডি’র উপজেলা প্রকৌশলী মহিউদ্দিন !
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী গোলাম মো: মহিউদ্দিন চৌধুরী’র বিরুদ্ধে যেন অভিযোগের অন্ত নেই। আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পছন্দনীয় ঠিকাদারদের কাজ বন্টন করে দেওয়া, ভূয়া বিল ভাউচার তৈরী করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ঠিকাদারদের থেকে উপরি নিয়ে নিম্নমানের উন্নয়ন কাজ করা, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে জেলা সদরে অবস্থান করার অভিযোগ ঠিকাদারসহ স্থানীয়দের। সর্বশেষ এই কর্মকর্তার অনিয়ম দূর্নীতির কারণে রোয়াংছড়ি এলজিডি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন স্থানীয় ভূক্তভোগীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এডিপির বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে রোয়াংছড়ি উপজেলা কমপ্লেক্সে ৪টি টিন সেট, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ডরমেটরী ভবন মেরামত কাজের একটি প্রাক্কলনে ৩৪ লাখ টাকা অনুমোদন পাওয়া যায়। কিন্তু পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি আহব্বান না করে ঠিকাদারদের মধ্যে কাজ ভাগভাটোয়ারা করে দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন এক ঠিকাদারের কাছ থেকে।
রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ক্যনুমং মারমা জানায়, মহিউদ্দিন চৌধুরী বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম,দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে এলজিইডি চট্টগ্রাম অঞ্চল ও চট্টগ্রাম তত্ত্ববধায়ক কার্যালয় অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবু তালেব,বান্দরবানে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন চাকমা,বান্দরবানে সিনিয়র সহকারি প্রকৌশলী মো: হোসেন জিল্লুর রহমানকে নিয়ে ৩সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে রোয়াংছড়ির স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অফিসের প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ তদন্ত্র করেন। এসময় ব্যাপক অনিয়ম,দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলে। আরো জানা গেছে, ইতোপূর্বেও চট্টগ্রাম বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলীও গত ২৭ এপ্রিল রোয়াংছড়িতে এসে তদন্ত করেছিল। তখনও তদন্তে সমস্ত ব্যাপক অনিয়ম,দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ কর্মকান্ডের প্রমান পায়।
রোয়াংছড়ির সমাজ সেবক দিপক ভট্টাচার্য বলেন,এক সময় গোলাম মো: মহিউদ্দিন চৌধুরীকে উন্নয়ন কাজের বিষয়ে জানতে চাওয়ায় তিনি খারাপ ব্যবহার করেন আমার সাথে।
আরো জানা গেছে, রোয়াংছড়ি উপজেলাতে সোয়ানলু পাড়া ও আলেক্ষ্যং লাংগে পাড়াসহ ১২টি সরকারি প্রাইমারী স্কুল চলমান নির্মাণ কাজে ঢালাইয়ে থিকনেস কম প্রদান এবং নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে ঠিকাদার কাজ করলেও এই এলজিডি কর্তা নিরব থাকেন ঠিকাদারের সাথে বিশেষ সম্পর্ক থাকার কারণে। এ ঘটনায় স্কুল ভবন ধসে পরে বিপন্ন হতে পারে শিক্ষার্থীদের জীবন। এই নির্মান কাজে ব্যাপক অনিয়ম দেখে চট্টগ্রামে বিভাগীয় অফিস থেকে মহিদ্দিন চৌধুরীকে শোকজও করা হয়।
এই ব্যাপারে রোয়াংছড়ি এলজিডির প্রকৌশলী গোলাম মো: মহিউদ্দিন চৌধুরী এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিবেদককে বলেন, আমি কোন অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত নয়, সরাসরি দেখা করে কথা বললে ভালো হবে।
স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধির সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১ম ও ২য় কিস্তি বরাদ্দ আসে। যথারীতিতে জনপ্রতিনিধি কাজ থেকে প্রকল্প দাখিল করলে প্রকল্প কমিটি মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে অনুমোদন পেলেও কোন প্রকল্প কত টাকার তা প্রকাশ করা হয়নি। দরপত্র আহব্বানের যে প্রকল্পটি বাছাই করা হয়েছে তা কত টাকা ধরা হয়েছে তাও প্রকাশ করা হচ্ছে না। চলতি অর্থ বছরেও বিগত অর্থ সালের ন্যায় দরপত্র আহব্বান না করে গোপনীয়তার মাধ্যমে নাম মাত্র কোটেশন করার পায়তারা করা হচ্ছে।
রোয়াংছড়ি এলজিডি’র উপসহকারি প্রকৌশলী মো: সাজেদুল বলেন, প্রকৌশলী গোলাম মো: মহিউদ্দীন চৌধুরী আমার সাথে একই পদের একজন কর্মকর্তার কিন্তু তাকে উপজেলায় চলতি দায়িত্বের দেওয়ায় তিনি ক্ষমতা অপব্যহার করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোয়াংছড়িতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরে যোগদানের পর থেকে মাসে ৪-৫ দিনের অধিক তিনি অফিস করেনি। অফিস আসলেও কেবল ১ঘন্টা অফিসে থেকে চলে যেতেন। যার কারনে রোয়াংছড়ি উপজেলার এলজিডি’র উন্নয়ন কর্মকান্ড গতি হারান বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
এই ব্যাপারে রোয়াংছড়ি এলজিডি’র প্রকৌশলী গোলাম মো: মহিউদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, শুধু আমি নয়, উপজেলার সব কর্মকর্তারা জেলা সদরে থাকে।
এদিকে গোলাম মো: মহিউদ্দিন চৌধুরী ঢাকার বসুন্ধরা ভিআইপি এলাকার এপোলো হাসপাতাল পাশে বহু দামের বিলাস বহুল ৬তলা বিশিষ্ট ফ্ল্যাট বাড়ি কিনেন, যা বান্দরবানের রোয়াংছড়ির কর্মস্থলে যোগদানের পর কেনা হয় বলে জানা যায়। কদিন আগে বাড়িটিতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ করে অনুষ্ঠানও করেন তিনি।
রোয়াংছড়ি এলজিডি সিনিয়র অফিসার (সিও) কামাল হোসেন বলেন,আমি মহিউদ্দিন চৌধুরী বাড়িতে একবার গেছি, বসুন্ধরা এলাকার ৬তলায় বিশিষ্ট বাড়ি। বাড়ি নং ৫,মহিদ্দিন চৌধুরীর পরিবার ২য় তলায় থাকেন। স্থানীয়রা মনে করছে, রোয়াংছড়ি এলজিডির এই কর্তার বিরুদ্ধে সুষ্ঠ তদন্ত্র করে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক।

আরও পড়ুন