জীবন বাঁচাতে আসছে রোহিঙ্গারা : সীমান্তে সব লুটে নিচ্ছে দালালরা

NewsDetails_01

ন্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তের চেরারমাঠ বড়ছন খোলায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা
আরাকান রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তের চেরারমাঠ বড়ছন খোলায় পালিয়ে এসেছে অন্তত ৫-৬ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক। খোলা আকাশের নিচে নানা সমস্যায় জর্জরিত মিয়ানমারের এ জনগোষ্ঠীর আর্তনাদে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে আসার সময় রোহিঙ্গারা গরু-ছাগল, হাঁস মুরগি ও স্বর্ণ অলঙ্কার নিয়ে আসলেও তা ছিনিয়ে নিচ্ছে দালালরা, এমন অভিযোগ অনেকের।
বেশি সময় অনাহারে থাকায় শারিরীক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছেন আশ্রয়প্রার্থীরা, ক্রমশই নেতিয়ে পড়ছেন তারা। খেতে না পেয়ে শিশুদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠছে পরিবেশ। নিজেরা না খেতে পেয়ে শিশুদের বুকের দুধও দিতে পারছেনা রোহিঙ্গা মায়েরা। এই মূহুর্তে সেখানে খাদ্য, শিশু খাদ্য ও ঔষুদের প্রয়োজন। কিন্তু কোন স্বেচ্ছাসেবী বা মানবাধিকার সংস্থা এখনো সেখানে পৌঁছায়নি। তবে বাংলাদেশী বিভিন্ন সংগঠন মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ দেখাচ্ছে । দূর দূরান্ত থেকে বাংলাদেশী নাগরিকরা গিয়ে তাদের সামান্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করলেও তা খুবই অপ্রতুল। বৃহ¯তিবার দুপুরে সরেজমিনে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চাকঢালা চেরারমাঠ বড়ছনখোলা এলাকায় এ দৃশ্য দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই পয়েন্ট আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা প্লাস্টিক আর খুঁটি দিয়ে কোনোমতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসে দিনাতিপাত করছে। দুর্গম ওই এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকায় পাহাড়ের পাদদেশে গর্ত খনন করে হাজারো রোহিঙ্গা জীবন রক্ষা করছে।
শত শত নারী, শিশু, বৃদ্ধ খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ছে আর বৃষ্টিতে ভিজছে। পরিধানের কাপড় ছাড়া অধিকাংশের কাছে কিছুই নেই। কারো কারো হাতে সুটকেস, বস্তা, থলে ও হাড়ি পাতিল দেখা গেছে।
প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গার অবস্থান নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের জিরো পয়েন্টে। একদিকে বার্মিজ সেনাবাহিনী তাদের দিকে অস্ত্র তাক করে আছে আর অন্যদিকে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড সে দেশের প্রবেশ করতে না দেয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে। খোলা আকাশের নিচে, পাহাড় ও বিলের ধারে গত ৪ দিন ধরে মানবেতর জীবন-যাপন করা এসব আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের আর্তনাদে মন ঘামছে না সীমান্তরক্ষীদের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষী জানান, “রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দেয়ার জন্য উপরের নির্দেশ আছে। আমরা কোনভাবে আমাদের দায়িত্বের অবহেলা করতে পারিনা।”
একাধিক রোহিঙ্গার সাথে কথা হলে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পাঁচ বছরের শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার মুখে একই কথা- মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিজিপির অত্যাচার নির্যাতন আর গুলি থেকে বাচঁতে তারা সবাই পালিয়ে এসেছেন।
রোহিঙ্গা নাগরিক নূর মোহাম্মদ, খলিল, ফকির আহমদ, সোনাইয়্যা এ প্রতিবেদককে বলেন, নিজ দেশে তারা ফিরতে চান কিন্তু সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পাশের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা বলেন, ৪-৫ দিন ধরে মিয়ানমার বাহিনীর ছোঁড়া গুলি মোকাবেলা করে ছিলাম। শেষ পর্যš টিকতে না পরে নিজ গ্রাম ছাড়তে হয়েছে।
এদিকে সীমান্তে রোহিঙ্গা অনপ্রবেশের কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা করেছে বিজিবি, পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নয়। যেহেতু এটি দুই দেশের আর্র্ন্তজাতিক সম্পর্কের বিষয়, সরকারের তরফ থেকে মিয়ানমারের সাথে যোগাযোগ চলছে। এই বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে রোহিঙ্গাদের যাতে সসম্মানে তাদের দেশে নিয়ে যায় কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের ৩১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ারুল আযীম বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে কোনোভাবেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া যাবে না। রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আমাদের কেউ কেউ স্বল্প মূল্যে তাদের কাছ থেকে গরু ছাগল আনার চেষ্টা এবং রোহিঙ্গা তরুণীদের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে আনার চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
বিগত দিনে মিয়ানমারে সহিংসতার সময় এই সীমান্ত দিয়ে কখনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেনি। কিন্তু সম্প্রতি সীমান্তের ৪৪-৪৬ নং পিলার এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দুই দেশের জিরো পয়েন্টে এসে আশ্রয় নিয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা শুধুমাত্র ইউনিফর্মধারীদের দায়িত্ব নয়, সব ধর্মের, সব দল মতের মানুষকে বর্তমান পরিস্থিতিকে মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে।
বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, বিজিবি আন্তরিকভাবে সীমান্তে কাজ করছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও ফোর্স এবং টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের সাথে মানবিক আচরণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন