এখনো অন্ধকারে আলীকদমের চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ১১টি পাড়া : দুর্ভোগে ৫ হাজার মানুষ

NewsDetails_01

আলীকদমের চৈক্ষ্যং ইউনিয়নে ৭নং ওয়ার্ডে স্থানীয় মুরুং জুমিয়ারা কাঁদা মাটির রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছেন
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত ¤্রাে ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত ১১টি পাড়া। উপজেলা সৃষ্টির ৩৫ বছরেও এখানে তেমন একটা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। রাস্তাঘাট ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে এখনো সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। এ এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থাকলেও যাতায়াতে নেই ভালো রাস্তা। ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কৃষকসহ এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আবার বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় খাল।
ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শিমন ত্রিপুরা অভিযোগ করেন, গত দু’বছর পূর্বে চৈক্ষ্যং খালের ওপর ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণে ডিজাইন, প্রাক্কালন ও বরাদ্দ অনুমোদন হলেও কাজের শুরুতে চাঁদাবাজদের দৌরাত্মে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উন্নত যোগাযোগ সুবিধা থেকে ওয়ার্ডবাসী বঞ্চিত। কাঁচা মাটির রাস্তাগুলোকে ব্রিক সলিং করে সড়ক যোগাযোগে উন্নয়ন সাধনের দাবী জানান তিনি।
জানা গেছে, উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডটি অত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। এখানে পাহাড়ের ঢালে ঢালে ১১টি পাড়ায় বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করছে এখানকার মানুষ। অনেক পরিবার দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন। এলাকায় মুরুং, ত্রিপুরা ও বাঙ্গালী পরিবার মিলে কমপক্ষে ৫ হাজার জনগোষ্ঠীর বসবাস। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা সরকারের অন্যকোন দপ্তর থেকে অবহেলিত এ ওয়ার্ডের রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। চলাচলের জন্য কাঁচা মাটির রাস্তাই একমাত্র ভরসা এলাকাবাসীর। একমাত্র বিদ্যালয়টির অবকাঠামো উন্নয়নেও নেই কার্যকর পদক্ষেপ।
স্থানীয় শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান,১৯৮৮ সালে এ ওয়ার্ডের মেনপা পাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছর পূর্বে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই টিনসেট ঘরেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। বিভিন্ন পাড়া থেকে বিদ্যালয়মুখি সড়ক যোগাযোগ ভালো নয়। ফলে শিক্ষার্থীরা দুর্গম পথ মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। যোগাযোগ অসুবিধার কারণে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যায়। বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী চৈক্ষ্যং খালের ওপর ব্রিজ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীকে খাল পারাপারে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের যাওয়ার পথে সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা মাটির। ফলে বর্ষা মৌসুমে কর্দমাক্ত মাটি পিচ্ছিল থাকার কারণে বিদ্যালয়গামী ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না।
স্থানীয় মেনপা পাড়ার বাসিন্দা বর্তমানে উপজেলা সদরে একটি ছাত্রাবাসের পরিচালক ইয়োংলক মুরুং বলেন, এ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা যুগ যুগ ধরে সরকারের সুষম উন্নয়ন পরিসেবা থেকে বঞ্চিত। দুর্গম পাহাড়ি এ ওয়ার্ডে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মুরুং জনসংখ্যাই বেশী। উন্নয়নের মূল স্রোত থেকে পিছিয়ে থাকা এ নৃ-জনগোষ্ঠী মূলতঃ জুমচাষ নির্ভর জীবিকা নির্বাহ করেন। ভালো রাস্তাঘাট না থাকায় তাদের উৎপাদিত জুমের ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকরা।
আলীকদম উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী চৈক্ষ্যং খালের ওপর গার্ডার ব্রিজ নির্মাণে প্রাক্কালন ও বরাদ্দ অনুমোদন হয়। প্রায় অর্ধকোটি টাকা বরাদ্দের এ ব্রিজটি চাঁদাবাজদের দৌরাত্মের কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি করতে অনীহা প্রকাশ করে। ফলে সে সময় ওই ব্রিজটি অন্যত্র নির্মাণ করা হয়।
চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান জানান, আমি নির্বাচিত হওয়ার থেকে ৭নং ওয়ার্ডের রাস্তার উন্নয়নে কাবিখা থেকে এটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। সে এলাকাটি উন্নয়ন ছোঁয়া বঞ্চিত। সেখানকার রাস্তাঘাট করতে গেলে অনেক টাকার প্রকল্প গ্রহণ প্রয়োজন। যেটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সীমিত অর্থে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন