আমার শরীর ভাল নেই : ভিক্ষু সংঘের সংঘরাজ

NewsDetails_01

ইনসেট অসুস্থ সংঘরাজ উ:স্বাসানা মহাথের
দেরি হলে আমাকে জীবিত দেখতে পেতো না। আমি মরে গেলে আমার সাথে তোমরা চাইলেও কথা বলতে পারবে না। জীবিত থাকতে তোমরা দেখতে এসেছো। তোমাদের দেখে ভাল লাগছে।আমার শরীর ভাল নেই। আমার জ্বর আসছে এসব কথা বলে বিছানায় অপরদিকে মুখ ফিরিয়ে নেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের নিকায় সংঘরাজ ও বান্দরবানের রুমায় মিনঝিরিপাড়া বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ উ:স্বাসানা মহাথের(৮৮)। তারপর আর কথা বলা সম্ভব হয়নি। এসব কথা জানিয়েছেন থানছি উপজেলার করুনা শিশু সদন‘র পরিচালক উ:গাইন্দামালা মহাথের।
পার্বত্য জেলার ভিক্ষু সংঘের নিকায় সংঘরাজ উ:স্বাসানা মহাথের দীর্ঘ প্রায় তিনমাস যাবত কঠিন রোগে ভোগছেন। তাঁর অসুস্থতা খোঁজখবর নিতে গত মঙ্গলবার দুপুরে বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রতিনিধি দল মিনঝিরি বৌদ্ধ বিহারে যান।এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন ভিক্ষু সংঘের থানচি হেডম্যান পাড়া বিহারাধ্যক্ষ উ উই চারাদা মহাথের, বলিপাড়া বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ উ:আচিন্না থের, ক্রংক্ষ্যংপাড়া বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ উ:আচিন্ডা থের ও রুমা অগ্রবংশ অনাথালয়ের পরিচালক উ:নাইন্দিয়া থের। ওইসময় পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদের সভাপতি ও রোয়াংছড়ি কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারে বিহারাধ্যক্ষ উ:পইঞা নাইন্ডা মহাথের এবং বালাঘাটা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারাধ্য উতেজাপ্রিয় থের মিনঝিরি বৌদ্ধ বিহারে উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার সন্ধ্যায় থানছির করুনা শিশু সদন পরিচালক উগাইন্দামালা মহাথের পাহাড়বার্তাকে বলেন, মিনঝিরিপাড়া বিহারাধ্যক্ষ উ:স্বাসানা মহাথের ভিক্ষু সংঘের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ও বয়োজ্যেষ্ঠ বৌদ্ধ ভিক্ষু। তাঁর আদর্শ, উপদেশ, বুদ্ধি, পরামর্শ্ পরিপূর্নতায় বৌদ্ধ সমাজের এক গর্ব। নীতি আদর্শে অতুলনীয় নিষ্ঠানবান। তিনি বৌদ্ধ সমাজে এক অহংকার। তাঁকে নিয়ে আমরা গর্ব বোধ করি।
কিন্তু গত তিনমাস ধরে তিনি ভীষণ অসুস্থ। নড়াচড়া করতে পারছেননা। বিছানায় শুয়ে আছেন সর্বক্ষন।কিছু জিজ্ঞাসা করলে দুই চোখ ফাল-ফাল করে।ভেসে যায়-চোখের জল।যে কোনো সময়ে কোন মহুর্ত, না ফেরার দেশে চলে যায়, সে বিশ্বাস আর নেই নিকায় সংঘরাজ উ:স্বাসানা্ মহাথের‘র। হয়তো, এজন্য-ই সংঘরাজকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রী বা অর্থ দান করতে গেলে বেশি কিছু গ্রহণ করতে চাননা তিনি।এ অবস্থা দৃষ্টে নিজেকে কষ্টের অনুভব করছি।বলার ভাষা হারিয়ে যায়। এমন কথা জানালেন গাইন্দামালা মহাথের।
এক প্রশ্নের জবাবে পাহাড়বার্তা‘কে পরিচালক উ:গাইন্দামালা আরো বলেন এখনো সময় আছে। সংঘরাজ উ:স্বাসানা মহাথের‘র উন্নত সুচিকিৎসা করা খুব জরুরি। সেব্যবস্থা নাকরা গেলে আমাদের মহান সংঘরাজকে অসময়ে হারাতে হবে। যা অপুরণীয় ক্ষতি হবে।এটি কারোর কাছে কাম্য নয়।সংঘরাজ সুচিৎসার জন্য বিত্তবান দায়ক-দায়িকাদের এগিয়ে আসার আহবান জানান এ মহাথের।
রুমা অগ্রবংশ অনাথালয়ের পরিচালক ও আশ্রমপাড়া বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ্ উ:নাইন্দিয়া থের তথ্যমতে, নিকায় সংঘরাজ উ:স্বাসানা্‘র তাঁর জন্মের বয়স এখন ৮৮বছর। কিশোর বয়সে শ্রমনত্ব গ্রহণ করেন। আর ২০বছর বয়সে বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে উপ-সম্পদা গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর বর্ষাবাস বা ওয়া-৬৮।বৌদ্ধ ধর্মের নিয়ম-নীতি অনুযায়ী বার্ষাবাস জ্যোষ্ঠতার ভিত্তিতে পার্বত্য জেলার ভিক্ষু সংঘের নিকায় সংঘরাজ হিসেবে অধিষ্ঠিত হন ২০০৭সাল, ডিসেম্বর মাস থেকে।
মিনঝিরি পাড়াবাসীর সূত্র জানায় তিনমাস আগে নিজ বিহার প্রাঙ্গনে আছাড়ে পড়ে যান সংঘরাজ স্বাসানা্ মহাথের।তখন থেকে পিঠে মেরুদন্ডের ব্যথার অনুভব হয়। ১০/১২দিনের মধ্যে কোমরে স্পর্শতার অনুভূতি হারিয়ে গিয়ে অবস হয়। তারপর থেকে নিজে নিজে আর হাটাচলা ও ওঠবস করতে পারেনি।ছিলেন বিছানায়।তবে গত ডিসেম্বর মাসে প্রথম সাপ্তাহ চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করান। ১০/১২দিন পর রুমায় মিনঝিরি পাড়া বৌদ্ধ বিহারে ফেরেন।তবে অসুস্থতার ওই চিকিৎসায় কোনো উন্নতি হয়নি বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন